প্রচ্ছদ জাতীয় রেস্তোরাঁয় ভাতের সঙ্গে মদ না পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তার তাণ্ডব

রেস্তোরাঁয় ভাতের সঙ্গে মদ না পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তার তাণ্ডব

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মংনেথোয়াই ও তার স্ত্রী ভাতের সঙ্গে মদ চেয়ে না পেয়ে বান্দরবান শহরের একটি রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছেন। এতে রেস্তোরাঁর মালিকের স্ত্রী, তার শিশু সন্তানসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার(১৬ এপ্রিল) রাতে বান্দরবান শহরের মধ্যমপাড়া এলাকার তোহজাহ রেস্তোরাঁয় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, মঙ্গলবার ছিল বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাইয়ের দ্বিতীয় দিন। কুমিল্লার এএসপি মংনিথোয়াই তার স্ত্রী ও কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে তোহজাহ রেস্তোরাঁয় ঢুকে ভাতের সঙ্গে মদ দিতে বলেন। এ সময় রেস্তোরাঁর মালিক শোঁয়েসাই মং তাদের ভাত দিতে দেরি হবে এবং মদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাতে চটে যান এএসপি ও তার স্ত্রী।

এ সময় এএসপির স্ত্রী বলেন, ‘আমি এএসপির বউ, মদ এখনই দিতে হবে। না হলে দোকান বন্ধ করে দিব’ এই কথা বলার পর তারা হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা রেস্তোরাঁর মালিক ও তার স্ত্রীকে মারধর শুরু করেন। এ সময় রেস্তোরাঁর মালিকের স্ত্রীর কোলে থাকা শিশু সন্তানটি মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়। মারধর থামাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন জখম হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রাতেই বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে পুলিশ গিয়ে রেস্তোরাঁটি বন্ধ করে দেয়।

এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন- রেস্তরার মালিক শোঁয়েসাই মং (৩২), তার স্ত্রী উম্যাশৈ (২৫), তাদের দুই বছরের সন্তান উখ্যাই, ভাই খিংসাই মং (৩৬) ও মা পাইনুচিং (৬৫)।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের চিকিৎসক দিদার বলেন, আহতদের শরীরে দাঁতের কামড়ের দাগ রয়েছে। তাছাড়া হাত-মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, আমরা তাদের চিকিৎসা দিয়েছি।

এ ঘটনা ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বান্দরবানে আলোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে এটাকে একজন পুলিশ কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহার আখ্যা দিয়ে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে এ ঘটনায় বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এ বিষয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী দাবি করেন, গতকালের অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হয়েছে।

এদিকে রেস্তোরাঁর মালিকের ভাই জসাই মারমা জানান, সকালে মীমাংসার জন্য জেলা পরিষদে বসলেও আমরা সঠিক বিচার পায়নি, তাই আমরা আদালতে এ ঘটনার ন্যায় বিচার চাইবো। আমরা চাই দোষীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মং নে থোয়াই বলেন, আমি বান্দরবান আসলে তোজাহ রেস্টুরেন্টে খেতে যাই তাদের খাবার ভাল। গতকাল রাতেও ডিনারর করার জন্য পরিবার নিয়ে তোজাহ রেস্টুরেন্টে যাই সেখানে গিয়ে খাবারের মেন্যু দেখছিলাম তখন দোকানের মালিক সুই সা মং আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বলে ভাত দিতে দেরি হবে খেলে বসেন না হলে চলে যান। এছাড়াও সে আরও খারাপ আচরণ করায় আমরা বাইরে চলে আসি কিন্তু আমার স্ত্রীর বিষয়টা খারাপ লাগে তখন সে আবার অভিযোগ করার জন্য ভেতরে যায় এবং বলে আমরা টাকা দিয়ে খাবার খেতে আসছি আপনারা এ ধরনের ব্যবহার কেন করছেন।

তখন দোকান মালিক সুই সা সে মদ্যপ অবস্থায় ছিল সে আমার স্ত্রীর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা শুরু করে। এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় তখন আমি ভেতরে গিয়ে বাধা দেই। এ সময় দোকানি আরও কয়েকজনকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসে এবং একপর্যায়ে আমার শ্যালক আর দোকানির মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমি পুলিশ কল করে নিয়ে আসি। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

মদের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসপি বলেন, আমি বান্দরবানের ছেলে এখানে মদ কোথায় পাওয়া যায় না যায় সেটা কি আমি জানি না? তোজাহ তে আমি মদ চাইবো কেন? সেখানে আমি খাবার খেতে গিয়েছি এর আগেও অনেকবার আমি সেখানে খেয়েছি এবং বিষয়টা বুধবার সকালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্যারের দপ্তরে দুই জনের মাঝে সমাধান হয়েছে।

এদিকে রেস্তোরাঁ মালিকের বড় ভাই জ সাই উ মারমা বলেন, আমাদের মধ্যে কোন সমাধান হয়নি, আমরা আদালতে মামলার প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।