প্রচ্ছদ হেড লাইন ভয়ে এমপি আনারের সমর্থকরা, বেরিয়ে আসছে নির্যাতনের লোমহর্ষক তথ্য

ভয়ে এমপি আনারের সমর্থকরা, বেরিয়ে আসছে নির্যাতনের লোমহর্ষক তথ্য

হেড লাইন: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের বাসার সামনে নেই তেমন লোকজন। নেই স্বজন বা নেতা-কর্মীদের ভিড়। শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। রোববার (২৬ মে) দুপুরের দিকে এমপি কন্যা ডরিন বাসার ভিতর থেকে বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তার বাবা হত্যার প্রমাণ চান। বাবার লাশের কোনো চিহ্ন, তার জামা কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল কিছু একটা তিনি দেখতে চান। অন্যদিকে আনারের সমর্থকরা রয়েছেন দখল হারানোর ভয়ে। দলীয় প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে আছেন এমপি সমর্থকরা। উঠে আসছে প্রতিপক্ষের উপর নির্যাতনের কথাও। এমপি কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ‘আমার বাবা শার্ট-প্যান্ট পরা ছিল। সবসময় চশমা পরতেন। তার পকেটে টুপি থাকতো, ছোট্ট একটি চিরুনি থাকতো। হাতে দুইটা আংটি ছিল, একটি ব্রেসলেট ছিল। তার তো সঙ্গে অনেক জিনিস ছিল। একটি জিনিস হলেও আমাকে দেখাতে হবে। একটা নির্দিষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে। তা নাহলে তো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি এর প্রমাণ চাচ্ছি। বাবার শরীরের একটা অংশ হলেও আমাকে দেখাতে হবে। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে আমাকে প্রমাণ করে দিতে হবে। তখন আমি জানবো এটা আমার বাবার একটি অংশ।

তিনি বলেন, পুলিশ বলছে, ছুরি বা চাকু দিয়ে আমার বাবাকে টুকরো টুকরো করে কাটা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সেই ছুরি চাকুও আমি দেখতে চাই। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘কালীগঞ্জের সুইপার পট্টি থেকে শুরু করে হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ সবকিছুই রয়েছে এমপি সমর্থকদের দখলে। বাস, ট্রাক টার্মিনাল, ইজিবাইক, মাইক্রোবাস, সিএনজি স্ট্যান্ডসহ যে সমস্ত জায়গা ভোগ-দখল করতো তা হারাবার ভয়ে আছেন অনেকেই।’ কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগরে সাংগঠনিক সম্পাদক তৃণমূলের নির্যাতিত আওয়ামী লীগ নেতা সাইদ বলেন, ২০১৬ সালের ২৯ নবেম্বর ইসরাইল, ওদুদ, কাওসার আইজুলসহ আমাদের অনেকের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। আমাকে আটক করে ৮ দিন গোপন করে রাখে। ওই ৮ দিন আমার ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। যার ফলে আমি এখন পঙ্গু। পরে আমাকে হাজতে দেয়। হাজত থেকে ১ মাস ৮ দিন পর আমাকে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে আসে পুলিশ। রিমান্ডে এনে রাতে কচাতলার পিছন থেকে অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে আমাকে আবার হাজতে দেয়। ওই সময় এমপি আনারের ভাগনে বর্তমান কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফ আমার ছোট ভাই আবু হাসানকে বলে তোর ভাইকে ক্রসফায়ারে দেব। যদি টাকা দিস তাহলে ক্রস মাফ হবে। তখন আশরাফ ক্রসফায়ার ঠোকানোর কথা বলে আমার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেয়। দারোগা ইমরান নেয় ১ লাখ টাকা। ওই মামলায় আমার ১৭ বছরের জেল হয়।

তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্ট থেকে ওই মামলায় আমি জামিন পায়। জেল থেকে বের হয়ে আশরাফের কাছে আমি টাকা ফেরত চেয়েছি। তখন সে দেবে কি দেবে না কিছুই বললো না। এমপি আনার মারা যাওয়ার পর এখন ওই টাকা ফেরত দিতে চাচ্ছে। আমি বলেছি জনসভা ডেকে নেতা-কর্মীদের সামনে মাফ চেয়ে আমার টাকা ফেরত দিতে হবে। মিথ্যা মামরা করে আমার জীবনের এতোটা বছর নষ্ট করে দিল কেন? আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করি। আমার অপরাধ আমি ওদের গ্রুপ করতাম না। আমার মতো অনেক নেতা-কর্মীকে তারা নাজেহাল করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফ বলেন, সাইদ আওয়ামী লীগ করে ঠিকই কিন্তু ওরা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ওরা ওই সময় এমপি আনারকে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। এমপি হত্যা ষড়যন্ত্রের মামলা হয় ওদের নামে। ওদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সাইদের ছোট ভাই মারা গেছে। তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেসময় আমি মেয়র বা দলীয় কোনো নেতাও ছিলাম না। টাকা নিলাম কিভাবে? এমপি নিহতের পর তারা আমাদের নামে এসব মিথ্যাচার করছে। মেয়র আশরাফ আরও বলেন, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমারা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। আমরা তার লাশ বা লাশের টুকরো হলেও ফেরত চাই। এ নিয়ে সোমবার (২৭ মে) সকালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতের কলকাতায় ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার’ হলেও তার মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি।