প্রচ্ছদ জাতীয় এমপি আনার খুন : ২ লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে ডিবি, বললেন...

এমপি আনার খুন : ২ লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে ডিবি, বললেন হারুন

জাতীয়: ভারতে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার লাশ বা লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার না হলে এই মামলার নিষ্পত্তি করা যাবে না। আলোচিত এই খুনের মামলার রহস্য উন্মোচন করতে রোববার কলকাতায় এসে এই মন্তব্য করেন ডিবি প্রধান হারুন আল রশিদ।

কলকাতায় সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে লাশ খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করে গোয়েন্দা প্রদান জানান ‘পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিআইডি অনেক কাজ করছে, অনেকদূর এগিয়েছে। আমরা আশা করি খুব শিগগিরি তার তথ্য পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি পুরো লাশ না পেলেও তার অংশবিশেষ উদ্ধার করতে পারব। কারণ লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার না হলে মামলার নিষ্পত্তিও করা যাবে না। এই কারণে আমাদের কাজের মূল উদ্দেশ্য দুটি। একটি হলো লাশের দেহাংশ উদ্ধার করা। অন্যদিকে, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য কোন অভিযুক্তদের নাম উঠে আসে কিনা তা দেখা। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে যেসব আসামি ধরা পড়েছে তাদের বয়ানের সত্যতা কলকাতায় এসে যাচাই করে দেখা।’

ডিবি প্রধান আরও জানান ‘এমপি আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বিদেশের মাটিতে কোথাও ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই হত্যার মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামানসহ যারা হত্যাকারী সকলেই বাংলাদেশি। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ৩৬৪ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলা অনুযায়ী বাংলাদেশে খুনের পরিকল্পনা হয়েছে এবং কলকাতায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে এবং পরে তার লাশ গুম করার জন্য লাশের টুকরো বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়া হয়েছে। আমাদের কাজ হচ্ছে অপরাধ যেখান থেকে শুরু হয়েছে এবং যেখানে শেষ হয়েছে- ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অনুযায়ী তদন্তকারী দলকে দুটি স্থানই পরিদর্শন করা।

এর আগে রোববার বেলা ১১ নাগাদ কলকাতার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল। ডিবি প্রধান হারুন আল রশিদ নেতৃত্বে চার সদস্যের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধি দলে আছেন সাহিদুর রহমান (অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার), আব্দুল আহাদ (ডিসি ডিবি), সাহীন ব্যাপারী(কর্মকর্তা)।

বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল যান নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেলে। সেখান থেকে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ এলাকায় সৃজন কর্পোরেট পার্ক’ হয়ে কলকাতার নিউ টাউন থানায় আসে। মাত্র ১৫ মিনিট নিউ টাউন থানার ইন্সপেক্টর-ইন-চার্জ (আইসি) কল্লোল কুমার ঘোষের সাথে কথা বলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আলোচনা হয় তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে। সেখান থেকে নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে যায় প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা। তার সাথে ছিলেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তারা।

থানা থেকে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন যায় গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল। সাথে ছিলেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও। গত ১৩ মে এই সঞ্জীবা আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। সেই ঘরটিতে যান ডিবি প্রধান। সাথে ছিলেন সিআইডি ও নিউ টাউন থানার পুলিশ। পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেন তারা।

এরপর সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে বেরিয়ে কলকাতার ভবানী ভবনে অবস্থিত রাজ্য পুলিশের সদর দপ্তরে যায় গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল। এই খুনের মামলায় সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। আলাদা করে কথা বলেন সিআইডি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. আর রাজাশেখরণের সাথে। এই মামলায় পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তারকৃত কসাই জিহাদ হাওলাদারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে জানা গেছে। পরে রাত পৌনে নটা নাগাদ তারা সিআইডি ভবন ছাড়েন। যদিও এই সাক্ষাতের বিষয়ে কোন কিছু জানাতে চাননি ডিবি প্রধান।

তবে জানান আগামীকাল সকালবেলায় ফের সঞ্জীবা গার্ডেনে তিনি যাবেন এবং সেখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন তিনি।

যদিও এদিন কলকাতায় পারে ডিবি প্রধান বলেন ‘পূর্ববঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শিমুল বিশ্বাস তিনি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করেছেন। আমানুল্লাহ নামেই তিনি ভারতে এসেছিলেন। তার কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি। এই সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এবং বাংলাদেশের পুলিশের মধ্যে আদান-প্রদান হয়েছে।’ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে এই খুনের পিছনের মূল কারণ খুঁজে বের করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন ডিবি প্রধান।

তাছাড়া সিআইডি’এর উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সাথে বাংলাদেশ পুলিশের যোগাযোগ হচ্ছে। এ দেশের পুলিশ বাংলাদেশে গিয়ে আসামিদের সাথে মুখোমুখি বসে কথা বলেছে। আমরা সিআইডির কাছে অনুমতি চাইব এখানে গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তর সাথে কথা বলে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে। তবে আমার জানা মতে এখনো লাশ উদ্ধার হয়নি।

সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ হাওলাদারকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে রশিদ জানান, যদি এক দেশ হতো সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আসামি এবং এখানকার আসামিকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু দুইটি দেশ ভিন্ন, তাই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন কথা বলেছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

আখতারুজ্জামানকে দেশে ফেরানো নিয়ে গোয়েন্দা প্রধান জানান ‘এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড, পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান এই ঘটনা বাস্তবায়নের ভার আমানুল্লার উপর দিয়ে গত ১০ তারিখ বাংলাদেশে ফিরে যায়। এরপর নেপাল, দুবাই হয়ে হয়তোবা যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। আমরা বাংলাদেশের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। ইন্টারপোলের সাথে কথা বলেও তাকে কীভাবে আনা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’

এদিকে বাংলাদেশের তিন সদস্যের ডিবি টিম কলকাতায় ঢোকার আগেই চতুর্থ দিনের মতো এমপি আনারের লাশের সন্ধানে রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাঙ্গড়ের সাতুলিয়া এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায় সিআইডি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী এবং এলাকার স্থানীয় জেলেদের সাহায্য নিয়ে তল্লাশি অভিযান চালায়। তবে দুপুরের পরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এদিনের মত উদ্ধার কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় তদন্তকারী কর্মকর্তারা। যদিও জাল ও যন্ত্র চালিত নৌকা ব্যবহার করেও খুঁজে পাওয়া যায়নি সেই লাশের টুকরো।