প্রচ্ছদ অপরাধ ও বিচার এমপি আনার হত্যাকাণ্ড, কলকাতায় গোপন আলাপের তথ্য ফাঁস

এমপি আনার হত্যাকাণ্ড, কলকাতায় গোপন আলাপের তথ্য ফাঁস

কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনায় আটক গাড়িচালকের দেয়া তথ্যে গড়মিল পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশি এমপি আনারের খণ্ডিত দেহ কোথায় ফেলা হবে সে বিষয়ে চলন্ত গাড়িতে গোপন আলাপচারিতা হয়েছে বলে নতুন তথ্য দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তারা। রোববার (২৬ মে) এ তথ্য দিয়েছে সিআইডি।

এমপি আনারের খণ্ডিত দেহ বহনকারী গাড়ির চালক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, গত ১৪ মে এক নারী ও দুই ব্যক্তিকে সুটকেসসহ কলকাতা শহরের এক্সেস মলের সামনে নামান তিনি। অন্যদিকে, সিসিভিটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানতে পেরেছে, এক্সেস মলে নামানোর আগে কলকাতার নজরুল তীর্থের কাছে গাড়িটি ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় এমপির খণ্ডিত দেহ কোথায় ফেলা হবে তা নিয়ে আলাপচারিতা হয় গাড়ির মধ্যে। এমনটি জানতে পেরেছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। এরপর তাদের এক্সেস মলের সামনে নামিয়ে দেয় চালক। ফলে সিআইডি মনে করে চালক গোপন আলাপ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন যা তিনি গোপন করছেন না। তদন্তের স্বার্থে ওই চালককে আটক করলেও তাকে গ্রেপ্তার দেখায়নি পুলিশ।

ভাড়ায় চালিত ওই ক্যাব চালককের নাম জুবের। তাকে গ্রেপ্তার করেনি তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে রেখেছে নিউ টাউন থানার পুলিশ। জুবেরকে এখন নিউ টাউন থানার লকআপে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশি এমপির খুনের ঘটনা অনেক আগে থেকেই পরিকল্পিত ছিল। এমনই তথ্য সিআইডির হাতে এসেছে। সূত্রের খবর, যে গাড়ি আটক করা হয়েছে সেই গাড়িটি ৩০ এপ্রিল অনলাইন রেন্টালের মাধ্যমে ভাড়া করে আততায়ীরা। এমপি বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসেন ১২ মে। তাকে খুন করা হয় ১৩ মে। এরপর ১৪ মে এমপির দেহাংশ সুটকেসে করে ফ্ল্যাট থেকে বের করে ভাড়ায় চালিত ওই গাড়িতে তোলা হয়।

এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনা তদন্ত করতে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলকাতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল আজ কলকাতার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। এই প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন আব্দুল আহাদ এবং সাহেদুর রহমান।

এদিকে চিকিৎসার জন্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বাংলাদেশি সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হন। প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, এমপি আনারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার নিথর দেহ নিয়ে যে নির্মমতা ও পৈশাচিকতা চালিয়েছে কয়েকজন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী তার লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে।

বিভিন্ন সংস্থার কাছে থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে হত্যার পর বাংলাদেশি এমপির মরদেহ থেকে প্রথমে চামড়া তুলে ফেলা হয়। পরে নিথর দেহটি টুকরো টুকরো করা হয়। হাড় থেকে মাংস আলাদা করার পর মাংস কিমা করা হয়। পরে একাধিক প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে শহরজুড়ে যত্রতত্র অংশগুলো ফেলে দেয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মুম্বাইয়ে কসাইয়ের কাজে জড়িত অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের পর নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের নিখুঁত পরিকল্পনা ও মরদেহ নিয়ে পৈশাচিকতা বর্ণনায় উঠে আসে।

সিআইডির সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কলকাতার নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে বাংলাদেশি এমপিকে হত্যা ও তার দেহ টুকরো করার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন ২৪ বছর বয়সী কসাই জিহাদ। তাকে শুক্রবার (২৪ মে) কলকাতার বারাসাত আদালতে নেয়া হয়।

জানা গেছে পরিকল্পিত নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামানের কলকাতায় যাওয়ার দুই মাস আগেই জিহাদকে ডেকে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ স্বীকার করেছে, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তিনিসহ চারজন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

এমপিকে হত্যার পরে তার শরীর থেকে মাংস এবং হাড় আলাদা করে ফেলে। মূলত পরিচয় নষ্ট করার জন্য এমপির মাংস কিমা করে তা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা হয়। আর হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে নেয়া হয়। এর সঙ্গে মসলা মেশানো হয় যাতে কেউ সন্দেহ না করে। পরে ওই ব্যাগগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে নানা ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দেয়া হয়।

সিআইডির সূত্র জানায়, এমপি আনার হত্যার হোতা বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান। তার নির্দেশে কলকাতার নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে জিহাদ ও অন্য চার বাংলাদেশি এমপি আনারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।