১৫ বছর ধরে জাহাজে চাকরি করছেন জেনারেল স্টুয়ার্ড মোহাম্মদ নুর উদ্দিন। এখন আর জাহাজে থাকতে ইচ্ছে করছে না তার। কত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরবেন তা নিয়েই উদ্বিগ্ন তিনি। স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানিয়েছেন এক সন্তানের জনক নুর উদ্দিন। ফারদিন নূর নামে আড়াই বছরের এক সন্তান রয়েছে তার। জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেদুল ইসলামের একই অবস্থা। মা ফেরদৌস আক্তারকে ফোন করে জানিয়েছেন দ্রুত দেশে ফিরতে চাওয়ার কারণ।
সোমালিয়ান জলদস্যুর জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়া এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকের ২১ জনই দুবাই থেকে জাহাজে করে দেশে ফিরবেন। ব্যতিক্রম কেবল নুর উদ্দিন ও মোজাহেদুল। জাহাজে নয়, বিমানে করে দেশে ফিরতে চান তারা।
বিমানে করে কেন ফিরতে চাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমার স্বামীর শারীরিকভাবে কোনো অসুস্থতা নেই। তবে মানসিকভাবে সে খুব বিপর্যস্ত। আমাকে বারবার বলছে, তার কিছুই ভালো লাগছে না। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো করতে পারছে না। দেশে ফিরলে তাকে মানসিক ডাক্তার দেখাব।
দেশে ফেরার পর নুর উদ্দিন ২/৩ মাস বিশ্রামে থাকবেন বলেও জানান তিনি। নুর উদ্দিন আবার জাহাজে উঠবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সুস্থ থাকলে অনেক কিছু করা যাবে। কিন্তু মানসিকভাবে সে যদি সুস্থ না থাকে তাহলে তো বিকল্প ভাবতে হবে আমাদের।
সমকালের সঙ্গে কথা হয় সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর মা ফেরদৌস আক্তারের সঙ্গেও। মোজাহেদুলও দুবাই থেকে বিমানযোগে ফিরতে চান দেশে। ফেরদৌস আক্তার বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে এখন প্রতিদিনই কথা হয়। আগের চেয়ে এখন অনেকটাই ভালো আছে তারা। আমাদেরও দুশ্চিন্তা কমেছে। তবে দুশ্চিন্তা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি এখনও। ছেলে বলছে তার মানসিক অবস্থা ভালো নেই। দ্রুত দেশে ফিরতে চায় সে। জাহাজে করে দেশে ফিরতে গেলে আরও ৭/৮ দিন দেরি হবে। এজন্য দুবাই থেকে বিমানে করে দেশে ফিরবে বলে জানিয়েছে সে। তবে কবে কোথায় আসবে তা এখনও জানে না। এটা জাহাজের মালিকপক্ষ ঠিক করবে।’
এমভি আব্দুল্লাহর আগামী ২২ এপ্রিল দুবাইয়ে নোঙর করার কথা রয়েছে। সেখানে পণ্য খালাস শেষ হওয়ারপরই নাবিকদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে মালিকপক্ষ। জাহাজে থাকা নাবিকরা যে যেভাবে ফিরতে চায় তাকে সেভাবেই দেশে ফেরাবে তারা।
জাহাজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মেহেরুল করিম বলেন, দুজন নাবিক দুবাই থেকে বিমানযোগে দেশে ফিরতে চায়। এদের একজন জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার। আরেকজন স্টুয়ার্ড। বাকি ২১ জন দুবাই থেকে জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন। ২ জন কখন কীভাবে দেশে ফিরবে সেটা আমরা জাহাজ নোঙর করার পর ঠিক করব। যে যেভাবে আসতে চায় তাকে সেভাবেই আনা হবে।
জলদস্যুদের কবল থেকে নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হওয়ার আগেই নাবিকেরা কে কোথা থেকে সাইন অফ (জাহাজের কর্ম হতে অব্যাহতি) করবেন, তার তালিকা চূড়ান্ত করে রাখে জাহাজের মালিকপক্ষ। তাদের নির্দেশে এ ব্যাপারে ক্যাপ্টেনকে একটি তালিকাও দিয়েছিল নাবিকরা। সেই তালিকায় জাহাজের ২৩ নাবিকের মধ্যে ১৮ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর থেকে সাইন অফ করবেন বলে জানিয়েছেন। বাকি ৫ জন জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে সাইন অফ করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে জাহাজের বেশিরভাগ নাবিক সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। বেশিরভাগ নাবিকই জাহাজে করে দেশে ফিরতে চান।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। অনেক নাটকীয়তার পর গত ১৪ এপ্রিল মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ছাড়া পায়। আর তাতে ৩২ দিনের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হন জাহাজের ২৩ নাবিক।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |