জুলাই মাস থেকে চলছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আগস্টের শুরুতে তীব্রতা বেড়েছিল সেই আন্দোলনের। ছাত্র নেতৃত্ব দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। দাবি তুলেছিল শেখ হাসিনার পদত্যাগের। তারপর ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এর আগে, পরিস্থিতি সামাল দিতে শেখ হাসিনা প্রশাসন মোতায়েন করেছিল সেনাবাহিনীকে।
সম্প্রতি এক সভায় ৫ ই আগস্ট নিয়ে কথা বলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারবৃন্দ। পদত্যাগের আগে শেখা হাসিনার সাথে কি কথা হয়েছিলো সেনা প্রধানের, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীন পরিস্থিতি এসব নিয়ে কথা বলেন তাঁরা।
সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার কয়েকদিন আগে সেনাবাহিনীর তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে।
২ আগস্ট এক বৈঠকে তরুণ সেনা কর্মকর্তারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে মাসব্যাপী বিক্ষোভের সূত্র ধরে পরিস্থিতি যখন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল, এমন সময় দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন করে সরকার। এর মধ্যে ২ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। ওই দিন এক বৈঠকে তরুণ সেনা কর্মকর্তারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রশমনে সেনাপ্রধান এ বিষয়টি তুলে ধরেন যে যদি অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়, তাহলে বাংলাদেশ কেনিয়া বা আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মতো হয়ে যেতে পারে।
কর্মকর্তাদের সংযত থাকার পরামর্শ দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৯৭০ সালের পর এমন গণবিক্ষোভ আর কখনো হয়নি। তাই এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।’
তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বৈঠকটি শেষ হয়।
বৈঠকে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর সেনাদের তরফ থেকে গুলি না ছোঁড়ার সিদ্ধান্ত হয়৷ এই আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন দুইজন সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন৷
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন অভিমুখে মিছিলের কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারী জনতার। মিছিল শুরু হওয়ার একঘণ্টা আগে গণভবনে আসেন সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক। শেখ হাসিনাকে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীকে জনবিক্ষোভ প্রতিরোধ করার যে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, তা পালনে তার সেনারা অক্ষমতা প্রকাশ করেছে; কারণ পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করার পরামর্শও দেন তিনি।
সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বললে রাগান্বিত হয়ে যান শেখ হাসিনা। তখন তিনি বলেন, “আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন। আমি পদত্যাগ করবো না। আপনি গুলি চালান।”
সূত্রের বরাতে জানা গেছে, প্রথমদিকে এই পরামর্শ মানতে একেবারেই নারাজ ছিলেন শেখ হাসিনা। তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে তার ছোটবোন শেখ রেহানাকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে বলেন সেনাপ্রধান এবং শেখ হাসিনাকে বোঝানোর অনুরোধ জানান।
কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হওয়ার পর শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেনাপ্রধান। জয়ের সঙ্গে কথা বলার পর দেশত্যাগে সম্মত হন শেখ হাসিনা। সেসময় নিরাপদে গণভবন থেকে বের হওয়ার জন্য তাদের হাতে সময় ছিল এক ঘণ্টারও কম।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |