মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে জামায়াতে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অনানুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে কথা বলেছেন। সহসাই জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সভায় এ ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। জামায়াতের একাধিক সূত্র বলছে, দলটি একাত্তর প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে
মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলে আসছে। দলটি কখনো এ নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। যদিও এ বিচার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
একাত্তর প্রশ্নে জামায়াতেও নানা সময় ভিন্নমত ছিল। দলটির নেতাদের কারও কারও মত ছিল, তখনকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতারা কখনও এ ব্যাপারে সাড়া দেননি। তবে জামায়াতের সব নেতাই দাবি করে আসছেন, জামায়াত নেতারা যুদ্ধাপরাধে জড়িত ছিলেন না। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াত অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। দেড় দশক পর দলটি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াতের লোকজন নিয়োগ পাচ্ছেন এমন আলোচনাও রয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন দলটির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা থামছে না।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত এ ব্যাপারে কী করতে পারে- তা নিয়ে দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা আলোচনা করেছেন। জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানান, একাত্তরে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে দেশের জনগণের কাছে জামায়াত যেতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দলের দুই-তিনজন শীর্ষ নেতাও একমত। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি তারা উপস্থাপন করবেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা কী ছিল তা জাতির সামনে পরিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি। তবে জামায়াত ক্ষমা চাইবে কি না কিংবা ক্ষমা চাইলেও কী প্রক্রিয়ায় চাইবে তা ওই নেতা খোলাসা করে বলেননি। তিনি বলেছেন, নির্বাহী পরিষদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই। শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের দুই সাবেক নেতা এ প্রসঙ্গে দু’টি দিক তুলে ধরেন।
তারা বলেন, একাত্তর প্রশ্ন জামায়াত যথাযথভাবে ডিল করতে পারেনি। তবে এটাও সত্য দেশে অতীতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না। জামায়াতের জন্য খোলামেলাভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না। তবে অতীতে জামায়াত নেতাদের কেউ কেউ দলের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেছিলেন। জামায়াতের সাবেক প্রভাবশালী নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক তার পদত্যাগের সময় বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। তবে জামায়াতের বেশির ভাগ নেতা বরাবরই এ ইস্যুতে নীরব বা ক্ষমা চাওয়ার বিরোধিতা করেছেন। তাদের মত হলো, জামায়াত কোনো যুদ্ধাপরাধ করেনি। তাছাড়া ক্ষমা চেয়েও আখেরে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন তারা।
সম্প্রতি বিএনপি’র কয়েকজন নেতাও মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকা বিষয়ে নতুন করে কথা বলেছেন। সর্বশেষ এ নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এখন একটা সুযোগ এসেছে, এই সুযোগে তারা (জামায়াতে ইসলামী) একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সেটি না করে তারা একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে জাস্টিফাই (জায়েজ) করার চেষ্টা করছে।’ জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান একাধিকবার এ ইস্যুতে কথা বলেছেন। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন- মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের কোনো ভুল সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হলে দলটি জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে।
একাত্তরের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা ভারতে চলে গিয়েছিল তাদের জন্য পরিস্থিতি এক রকম ছিল আর যারা দেশে ছিল তাদের জন্য অন্যরকম অবস্থা ছিল। দেশে থাকাদের হয়তো পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হতো, না হয় তাদের পক্ষে থাকতে হতো। এমন অবস্থায় যারা সরাসরি যুদ্ধ করেনি তাদের অনেকের অবস্থান পাকিস্তানিদের পক্ষে ছিল। যা আর পরবর্তীতে আলোচনা হয় না। আলোচনা শুধু জামায়াত নিয়ে
সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |