
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যা করার পরপরই খুনিদের নিরাপদে সীমান্ত পার করানোর একটি সুপরিকল্পিত নেটওয়ার্কের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পেয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, পালানোর ব্যবস্থায় মূল ভূমিকা ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরপুর এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পীর। তাকে সহযোগিতা করেছিলেন ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ইতিমধ্যে আমিনুল ইসলামের গ্রেপ্তার করেছে। হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাবের হাতে মোট ১১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, খুনিরা—প্রধান শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ও সহযোগী আলমগীর শেখ—রাতেই ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তে পৌঁছে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যান। পুরো সীমান্ত পারাপারের সমন্বয় করেন যুবলীগ নেতা তাইজুল, যিনি তখন নিজে ভারতে থাকলেও দূর থেকে নির্দেশ দেন।
হালুয়াঘাট এলাকায় টাকার বিনিময়ে সীমান্ত পারাপারে যুক্ত ছিলেন কিছু দালাল। তদন্তে জানা যায়, তাইজুল আমিনুলকে ফোন করে ফিলিপ নামের দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেন। এরপর আমিনুল দালালের কাছে ৫ হাজার টাকা পাঠান, যা বিনিময়ে ফয়সাল ও আলমগীরকে সীমান্ত পার করানো হয়।
পরবর্তীতে প্রযুক্তির মাধ্যমে ফয়সাল ও আলমগীরের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। হালুয়াঘাট সীমান্তের আশপাশ থেকে অভিযান চালিয়ে ফিলিপের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ঢাকায় বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর খবর দেখে সীমান্ত পার হয়েছে।
ডিবি-এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমিনুল ইসলামের গ্রেপ্তারের পর তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে আমিনুল, ফিলিপ ও তাইজুলের একাধিক ফোনালাপের তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিবারের বরাত দিয়ে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এবং গত ছয় মাস ধরে মোবাইল ব্যবসা করছেন। তিনি কেন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তার পরিবার জানে না।
পটভূমি হিসেবে বলা যায়, শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। দীর্ঘদিন এলাকার গণসংযোগ চালানো হাদিকে ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়। আহত অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলে ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলে দাফন করা হয়।
সূত্র : জনকণ্ঠ












































