
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরীফ ওসমান হাদি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম জিজ্ঞাসাবাদে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে আদালতকে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুই দফায় মোট আট দিনের রিমান্ড শেষে তাদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিবি পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ, রিমান্ড শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট রিপন হোসেন আবেদন মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে পুলিশ কর্মকর্তা এসআই রুকনুজ্জামান আদালতকে জানান, রিমান্ড শেষে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্যের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
আদালতে দেওয়া আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় মানবপাচার ও অবৈধ পণ্য চোরাচালান চক্রের সদস্য ফিলিপের সহযোগী। তারা পরস্পর চাচাতো ভাই এবং সীমান্তপথ ব্যবহার করে ভারতে পালাতে সহায়তার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, মামলার প্রধান পলাতক আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীরা ভারতে পালিয়ে থাকলে, সেই পলায়নের সঙ্গে এই দুই আসামির সম্পৃক্ততা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা কৌশলে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন বলে দাবি তদন্ত কর্মকর্তার।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর সীমান্ত এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে আটক করে বিজিবি। পরে ১৮ ডিসেম্বর তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে প্রথম দফায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। এরপর ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ওসমান হাদির মৃত্যুর পর মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা যুক্ত করা হয়।
এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা মো. হুমায়ুন কবির, মা মোসা. হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল এবং সহযোগী মো. কবির। পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সিবিউন দিউ, সঞ্জয় চিসিম ও আমিনুল ইসলাম রাজুকে।
প্রসঙ্গত, জুলাই অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের মাধ্যমে আলোচনায় আসা ওসমান হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেলযোগে আসা দুর্বৃত্তরা তার মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং অস্ত্রোপচারের পর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র : জনকণ্ঠ











































