
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমাতে ফ্যাসিবাদী সরকারের ভয়াবহ কিছু নির্দেশনার তথ্য প্রকাশ হয়েছে। ড্রোন দিয়ে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ লোকসমাগমের স্থানগুলোর ছবি তুলতে বলা হয়েছিল। এরপর সেখানে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো এবং বোম ফেলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ ফজলে নূর তাপসকে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সেনাপ্রধানের সাথে কথা বলছি ওরা রেডি থাকবে ঠিক আছে, এখন তো আমরা অন্য ইয়ে করতেছি। ড্রোন দিয়ে ছবি নিচ্ছি আর হেলিকপ্টারে ইয়ে হচ্ছে মানে কয়েক জায়গায়।
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) বিশেষজ্ঞ হিসেবে জবানবন্দি দেন প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। আদালতে তার উপস্থাপন করা অডিও রেকর্ডে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ট্রাইব্যুনালে সরাসরি সম্প্রচারিত সাক্ষ্যে জোহার অডিওগুলো শুনানো হয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এসএম মাকসুদ কামাল ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর পাঁচটি কথপোকথনে আন্দোলন দমনের নানা অপকৌশলের কথা উঠে আসে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে তিনি এ জবানবন্দি দেন । প্রসিকিউটর জোহা জানান, সিআইডি ফরেনসিক বিভাগের পরিদর্শক রুকনুজ্জামান ওই ফোনালাপগুলো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন এগুলো শেখ হাসিনার।
আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, ওরা পুড়িয়ে দিল সেতু ভবনআমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, ওরা পুড়িয়ে দিল সেতু ভবন
ফোনালাপে শোনা যায় তাপস বলেন, সন্ত্রাসীরা তো বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় বিভিন্ন সময় ঘুরতেছে, এখন কোথায় কী আক্রমণ করে বলা যাচ্ছে না। অপর প্রান্ত থেকে শেখ হাসিনা বলেনÑনা, আমরা ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে, ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি এখন, এখন লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করবে, যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে।
কারো পিঠের চামড়া থাকবে না, পলাতক নওফেলের হুমকিকারো পিঠের চামড়া থাকবে না, পলাতক নওফেলের হুমকি
তাপস বলেন, জি, জি। হ্যাঁ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো ওইখানে আছে, সচিবালয়ে কয়েকবার ওরা আক্রমণ করছে, ওরা তো রাতে যদি আবার কোথাও কোথাও বিভিন্ন সংবেদনশীল বাসাবাড়িতে আক্রমণ করে, তাহলে তো ইয়ে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, রাতের বেলা সব ভিজিলেন্স থাকবে এবং এই এতদিন তো, আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটু আস্তে আস্তে অনেক জায়গায় গ্যাদারিং ক্লিয়ার হচ্ছে। দরকার নাই ওটা, দরকার নাই, আমি সেনাপ্রধানের সাথে কথা বলছি ওরা রেডি থাকবে ঠিক আছে, এখন তো আমরা অন্য ইয়ে করতেছি। ড্রোন দিয়ে ছবি নিচ্ছি আর হেলিকপ্টারে ইয়ে হচ্ছে মানে কয়েক জায়গায়।
তাপস বলেন, তাহলে ওই কিছু ছবি দেখে পাকড়াও করা যায় না রাতের মধ্যে। শেখ হাসিনা বলেন, সবগুলিকে অ্যারেস্ট করতে বলেছি রাত্রে। ওটা বলা আছে, আর যেখানে গ্যাদারিং দেখবে সেখানে ওই উপর থেকে, এখন উপর থেকে (গুলি) করাচ্ছি, অলরেডি শুরু হইছে কয়েকটা জায়গায়। অপরপ্রান্ত থেকে তাপস বলেন, জি।
জোহা তার জবানবন্দিতে জানান, শেখ হাসিনার মোট ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড জব্দ করা হয়েছে ।
শেখ হাসিনা ও তাপসের টেলিফোন আলাপের একটি অংশে শোনা যায়, একপর্যায়ে তাপস বলেন, জি আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ইয়ে করেন। তখন শেখ হাসিনা বলেন, সব জায়গায় আগুন, বিআরটি ও বিটিআরসি বন্ধ করে দিছে, পোড়াইয়া দিছে, বিটিভি পোড়াইয়া দিছে এখন তো ইন্টারনেট বন্ধ, সব পোড়াইয়া দিছে, এখন চলবে কীভাবে! তাপস বলেন, জি, এটা ভালো হইছে, জি। শেখ হাসিনা বলেন, না.. পোড়াইয়া দিছে, মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে। আমি বলছি যা যা পোড়াতে… ও আমাদের সেতু ভবন পোড়াইছে।
তাপস বলেন, জি ওরা রাতে মনে হয় আরো ব্যাপক আক্রমণ করবে। শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেটা পোড়াইছে..।