ধর্ম ও জীবন: মহান আল্লাহর অস্তিত্বের জানান দেয় যেসব সৃষ্টি তার অন্যতম ও বড় দুটি হলো সূর্য ও চন্দ্র। চন্দ্র-সূর্য থেকে মানুষ বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়। পবিত্র কুরআনে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে সূর্য ও চন্দ্র প্রসঙ্গ। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই সত্তা, যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জ্বল ও চাঁদকে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।’ -(সুরা ইউনুস : ৫) সূর্যগ্রহণ নিয়ে মাতামাতি করে সময় ব্যয় না করে নামাজ ও প্রার্থনায় নিয়োজিত থাকা জরুরি। সূর্যগ্রহণের সুন্নত আমল হচ্ছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, দোয়া করা, নামাজ পড়া এবং সাদকা করা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ পড়তেন। এ নামাজকে ‘সালাতুল কুসুফ’ বলা হয়। তাই সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ পড়া সুন্নত। তা জামাআতের সঙ্গে আদায় করাও সুন্নত। দশম হিজরিতে যখন মদিনায় সূর্যগ্রহণ হয়, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়ে লোকদেরকে নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। সম্ভবত সে সময় তিনি জীবনের সর্বাধিক দীর্ঘ নামাজের জামাআতের ইমামতি করেছিলেন। সূর্যগ্রহণের সে নামাজের কিয়াম, রুকু, সেজদাহ মোটকথা, প্রত্যেকটি রুকন সাধারণ সময়ের (অভ্যাসের) চেয়ে অনেক দীর্ঘ (লম্বা) ছিল। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে থাকাকালে সূর্য গ্রহণ শুরু হলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন এবং পরিহিত চাদর টানতে টানতে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তার সঙ্গে আমরাও প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের নিয়ে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করলেন এবং সূর্য গ্রহণ ছেড়ে গেল। তিনি বললেন এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, কারও মৃত্যুর কারণে কখনও সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন (সূর্য/চন্দ্র) গ্রহণ দেখবে তখন অবস্থাটি থাকা পর্যন্ত নামাজ আদায় করবে এবং দোয়ায় মগ্ন থাকবে।’ (বুখারি)
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, সালাতুল কুসুফ বা সূর্যগ্রহণের নামাজ দুই রাকাআত। আর তা সূর্যগ্রহণ শুরু থেকে নিয়ে শেষ সময়ে পড়তে হয়। সূর্যগ্রহণের নামাজ ২ রাকাআত। অন্য সাধারণ নামাজের মতই এই নামাজ আদায় করতে হয়। যদিও প্রতি রাকাআত অনেক দীর্ঘ করে পড়তে হয়। তবে প্রত্যেক রাকাআতে ২ রুকু, ৩ রুকু বা ৪ রুকু আদায়ের এক ব্যতিক্রমী নিয়মে নামাজ পাড়ার বিবরণও বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় একবার সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। তিনি এক ব্যক্তিকে এ ঘোষণা দেয়ার উদ্দেশে পাঠিয়ে দিলেন- ‘জামাআতে নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। (ঘোষণা শুনে) সবাই একত্রিত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনে অগ্রসর হয়ে তাকবির উচ্চারণ করলেন এবং দুই রাকআত নামাজ আদায় করলেন। দুই রাকআতে চারটি রুকু’ ও চারটি সাজদাহ করলেন।’ (মুসলিম) সূর্যগ্রহণের নামাজে আজান ও ইকামত নেই। মাকরূহ ওয়াক্ত ব্যতীত মসজিদে এই নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। দিনের বেলায় সূর্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আর দিনের নামাজ হওয়ার কারণে কেরাত আস্তে পড়াই নিয়ম। হাদিসে এসেছে- হজরত জাবির ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিয়ে ২ রাকাআত সূর্যগ্রহণের নামাজ পড়লেন কিন্তু উভয় রাকাআতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে (কেরাতের) কোনো আওয়াজ শুনিনি।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ) সূর্য গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ নামাজ পড়া সুন্নত। তবে সূর্যগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে নামাজ শেষ করলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে সূর্যগ্রহণ চলাকালীন বাকি সময়টুকতে জিকির, দোয়া, তাওবা-ইসতেগফা, দান-সাদকার মাধ্যমে কাটানো উত্তম।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |