
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে সোমবার, ১৭ নভেম্বর। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই তারিখ নির্ধারণ করেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলাটি হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ট্রাইব্যুনাল প্রথম বিচারকাজ শুরু করে এবং ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরবর্তীতে ১৬ মার্চ ২০২৫ তারিখে মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়। প্রসিকিউশন মোট পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করে।
১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা আনুষ্ঠানিক ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২,০১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ ৪,০০৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২,৭২৪ পৃষ্ঠা রয়েছে। এক জুন ২০২৫ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ১০ জুলাই তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
এক পর্যায়ে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ট্রাইব্যুনাল আবেদনটি মঞ্জুর করে তাকে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হিসেবে সাক্ষ্য দিতে অনুমতি দেয়। ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন প্রতিরক্ষায় তাদের খালাস প্রার্থনা করেন। প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, “রায়ে শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড হবে বলে প্রত্যাশা করছি। বিচার বাধাগ্রস্ত করতে আওয়ামী লীগ দেশ-বিদেশে অপচেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু বিচার তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।”
মামলায় প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরপরই আসাদুজ্জামান খান, আইজিপি মামুন ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়, এতে ১,৫০০ জন নিহত এবং ২৫,০০০ জন আহত হন। দ্বিতীয় অভিযোগে শেখ হাসিনা আন্দোলন দমন করতে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে সেই নির্দেশ কার্যকর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অডিও প্রমাণে এ নির্দেশের সত্যতা উঠে আসে। তৃতীয় অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়। চতুর্থ অভিযোগে ঢাকার চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত ছয় নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিনজনকেই অভিযুক্ত করা হয়। পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয়জন নিরীহ নাগরিককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাতেও শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ট্রাইব্যুনাল জানায়, রায়ের তারিখ ১৭ নভেম্বর (সোমবার) নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিনই নির্ধারিত হবে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনা ও তার সহ-আসামিদের ভাগ্যে কী ঘটছে।












































