শিক্ষা উপদেষ্টার পায়ে ধরে নিজেদের আকুতি জানাচ্ছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। সামান্য বেতনের চাকুরিটি যেন দূরদূরান্তে না দেয়া হয় এবং অন্যান্য কিছু দাবি নিয়ে এভাবেই পায়ে জড়িয়ে ধরেন শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি নতুন বাংলাদেশ। এ আন্দোলনের স্লোগানগুলোর অন্যতম ছিল-‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’। বৈষম্যের শিকড় উপড়ে ফেলার জন্যই শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শিক্ষার্থীরা আর তাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অথচ খোদ শিক্ষাব্যবস্থায়ই রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতিকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় বিভাজন করা হয়েছে। প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পুরোপুরি সরকারি ও বাধ্যতামূলক। শিক্ষাব্যবস্থায় দেশের সবচেয়ে বড় যে অংশ, সেটি মাধ্যমিক শিক্ষা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার প্রায় ৯৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বেসরকারি এমপিওভুক্ত এবং বৈষম্যের সবচেয়ে বড় অংশটি এখানেই।
বস্তুত মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক-কর্মচারীরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে তুলনা করলে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। মাধ্যমিক শিক্ষায় যেসব বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ইএফটির মাধ্যমে বেতন না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বেতন না পাওয়া কিংবা ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক বেতন উত্তোলনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একধরনের হয়রানির শিকার হওয়া। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেমন বদলিজনিত সুযোগ রয়েছে, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (এমপিওভুক্ত) বদলির সুযোগ না থাকায় সামান্য বেতনে এক জেলার শিক্ষকদের অন্য জেলায়ও চাকরি করতে হয় আর চাকরিকালীন আজীবন এই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১ হাজার টাকা আর চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, যা বর্তমান সমাজব্যবস্থায় পুরোপুরিই হাস্যকর একটা বিষয়। ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে একজন শিক্ষক যখন তার চাকরিজীবন শুরু করেন, সেই শিক্ষকের কাছে জাতি কী আশা করতে পারে? বলা হতে পারে, টাকার প্রশ্নে শিক্ষকতা নয়, শিক্ষকতা হলো সম্মান আর সেবার বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একজন শিক্ষককে তিন থেকে চারজনের একটা সংসার চালাতে গেলে বর্তমানে কেমন খরচ হয়, এটা জনগণ জানে।
মাধ্যমিক শিক্ষকরা তাদের অধিকার, তাদের সম্মানজনক অবস্থানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এর প্রধান কারণ বেতনবৈষম্য। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে এ বৈষম্য প্রকট। শুধু তাই নয়, অন্য যে কোনো সেক্টরের চাকরিজীবীদের চেয়েও বেতন ও সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার। বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। দেশে সরকারি শিক্ষকদের ঈদ, পূজা ও অন্যান্য উৎসবের সময় উৎসব ভাতা দেওয়া হয় মূল বেতনের শতভাগ, সেখানে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেওয়া হয় মূল বেতনের চার ভাগের এক ভাগ, কর্মচারীদের দেওয়া হয় অর্ধেক। দেশে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, প্রভাষক, উপাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষসহ মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ২৪৪ জন কর্মরত রয়েছেন। এ বিপুলসংখ্যক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী আজ বৈষম্যের শিকার।
সামগ্রিক বিবেচনায় শিক্ষকদের প্রধান দাবি চাকরি জাতীয়করণের এবং তা যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত প্রদানের। এ ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিতে যদি সরকারের সময়ের প্রয়োজন হয়, সরকার সে সময়টুকু নিয়ে হলেও যেন শিক্ষকদের এ প্রাণের দাবিটা মেনে নেয়। তবে আগামী যে কোনো উৎসবের আগেই যেন শিক্ষক-কর্মচারীদের শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শিক্ষাবান্ধব এ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছে এদেশের কয়েক লাখ বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারী। বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা তাকিয়ে আছেন সেই কাঙ্ক্ষিত সুদিনের দিকে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |