দেশজুড়ে: রাজশাহী শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন জহিরুল হক রুবেল (৪০)। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছিল একাধিক মামলা। এর আগেও হয়েছিল দুটি হত্যা মামলা। তাকে ব্যবহার করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা। তাকে গ্রেফতারের পর নেওয়া হয়েছে রিমান্ডে। সেখানে তিনি মুখ খুলেছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে তিনি অনুতপ্ত বলেও জানিয়েছেন। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদে করছেন কান্নাকাটি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতিতে জড়িয়ে ভুল করেছি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকে বাদাম বেঁচে খেলেও ভালো করতাম। এখন এমন বিপদে পড়তে হতো না।’
গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে জোড়া পিস্তল নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর একসঙ্গে দুই হাতে চালাতে দেখা যায় রুবেলকে। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে দুজন মারা যান। এ ঘটনায় করা দুটি মামলাতেই আসামি করা হয় সন্ত্রাসী রুবেলকে।
গত ১৩ আগস্ট রাতে কুমিল্লা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করে র্যাব। রাজশাহী আনার পর তাকে শিবির নেতা আলী রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত রোববার আদালতে তোলা হয়। এ সময় পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চায়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আজ (বুধবার) রিমান্ডের চতুর্থ দিনের মতো রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলেই রুবেল কান্নাকাটি করছেন। রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণে রুবেল অনুতপ্ত বলে জানাচ্ছেন। হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, রাজনীতি করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজশাহীর নেতাদের কেউ এখনো সেভাবে গ্রেফতার হয়নি। কিন্তু তিনি ফেঁসে গেছেন। তবে রুবেল জোড়া পিস্তল হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর কথা রিমান্ডের প্রথম দিনই স্বীকার করেছেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতেও রুবেল প্রস্তুত।
জানা গেছে, রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আলী রায়হান হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) তাজ উদ্দিন ছাড়াও সাকিব আনজুম হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরীফুল ইসলাম উপস্থিত থাকছেন। এ ছাড়া থাকছেন নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। রুবেলের কাছ থেকে তারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলার খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করছেন।
আলী রায়হান হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তাজ উদ্দিন বলেন, রুবেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তবে অস্ত্র কোথা থেকে এসেছিল, কারা অর্থায়ন করেছিল এসব বিষয় এখনো জানা যায়নি। আশা করছি, আমরা একটা ফলাফল আনতে পারব। না পারলে আবার রিমান্ডে নেব।
সাকিব আনজুম হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরীফুল ইসলাম বলেন, একটি হত্যা মামলায় রুবেল রিমান্ডে আছে। ওই মামলার রিমান্ড শেষ হলে তাকে আমিও রিমান্ডে আনব।
অভিযুক্ত রুবেলের বাড়ি রাজশাহী নগরের চণ্ডীপুর এলাকায়। যুবলীগের এই কর্মীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে সবাই ‘চণ্ডিপুরের রুবেল’ নামে চেনে। সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করা আবদুল ওয়াহেদ খান টিটোর বন্ধু তিনি। তার মাধ্যমে মেয়র লিটনের ‘ডান হাত’ হিসেবে কাজ করতেন রুবেল। রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে রুবেলকেই প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
রুবেল চলতেন দামি প্রাইভেটকারে। রুবেলের নামে আগে থেকেই থানায় হত্যা, হত্যার চেষ্টা, জমি দখল, অস্ত্র লুট, মাদক পাচার ও বিস্ফোরক আইনে ছয়টি মামলা ছিল। ৫ আগস্টের পর দুটি হত্যাসহ আরও কয়েকটি মামলা হয়েছে। রুবেল পর পর দুইবার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। গত বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রুবেল প্রার্থী হয়েছিলেন মামলার তথ্য গোপন করে। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কিছুদিন পর রুবেল কাউন্সিলরের কার্যালয়ে প্রস্রাব করে আসেন। তার এমন কাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়েছিল সে সময়।
সূত্র : সময়ের আলো
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |