গাজা সংঘাত বন্ধ হওয়ার পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব বিরোধিতা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, পুরোপুরি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত গাজায় আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু গাজায় হামাসের ধ্বংস এবং অবশিষ্ট ইসরায়েলি বন্দিদের ফিরে আসার মাধ্যমে ‘সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত’ আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর এতে ‘আরও অনেক মাস’ সময় লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার লাইভ আপডেটে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন সংকটে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকেই একমাত্র পথ হিসেবে উল্লেখ করছেন। যদিও গাজায় অভিযানে তিনি ব্যাপকভাবে ইসরায়েলকে সমর্থনে দিয়ে আসছেন।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। বাস্ত্যুচ্যুত হয়েছেন ৮৫ শতাংশ গাজাবাসী।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের এর জেরে হামলা বন্ধ এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধের ইতি টানার লক্ষ্যে অর্থবহ সংলাপে অংশ নিতে ব্যাপক চাপ আসে ইসরায়েলের ওপর। ইসরায়েলের বিরোধীরা তো বটেই এমনকি মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও নতুন করে দীর্ঘদিন আলোচনার বাইরে থাকা সেই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানেরই তাগিদ দিচ্ছে।
দ্বিরাষ্ট্র সমাধান মানে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশেই প্রতিষ্ঠা পাবে। কারো কারো প্রত্যাশা, বর্তমান সংকট হয়তো বিবদমান পক্ষগুলোকে আবার কূটনীতির পথে ফিরতে বাধ্য করবে। সেটিই অন্তহীন সংঘাত বন্ধের একমাত্র পথ। কিন্তু, নেতানিয়াহুর মনোভাব বিপরীত।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘জর্ডান নদীর পশ্চিমের ভূভাগে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক।’ অথচ, এই ভূমি সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে পড়ার কথা।
‘এটা এক অপরিহার্য পরিস্থিতি এবং এটা ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু কী আর করা? আমি আমার আমেরিকান বন্ধুদের এই সত্যিটাই বলেছি এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে এমন কোনো বাস্তবতা আরোপ করার চেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছি।’
নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ধারণার বিরোধিতায়। গত মাসেই সদর্পে বলেছেন, সেই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঠেকিয়ে দিতে পেরে তিনি গর্বিত।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতার প্রকাশ্য বিরোধিতা এবং চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রত্যয় বলে দেয় পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ইসরায়েলের দূরত্ব বাড়ছে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনাটি ঘটে। হামাস সদস্যরা এক হাজার তিনশ’ জনকে হত্যা করেন। জিম্মি করা হয় প্রায় আড়াইশ জনকে।
সেই শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে মর্মে সমর্থন জানিয়ে আসছে দেশটিকে। কিন্তু গাজায় মৃতের সংখ্যা আর ভয়াবহতা যখন দিনকে দিন বাড়তে থাকল, পশ্চিমা সরকারগুলো তখন ইসরায়েলকে রাশ টানার আহ্বান জানায়।
হোয়াইট হাউস বারবার ইসরায়েলের সামরিক নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে: মূলত ব্যাপকভাবে বিস্তৃত বিমান হামলার পরিবর্তে আরও নির্ভুল-নির্দেশিত অস্ত্রের মাধ্যমে হামলা করার আহ্বান; স্থল আক্রমণ নিরুৎসাহিত করা; এবং গাজায় সংঘর্ষ-পরবর্তী সময়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকাসহ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
কিন্তু ওয়াশিংটনের এসব পরামর্শের বিপরীতে ইসরায়েল প্রায়শই কার্যত বধির থেকেছে বা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে – সেগুলোও আবার প্রায়শই প্রকাশ্যে। এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সফরের সময়ও।
নিঃশর্ত সহায়তা না দেওয়ার জোর দাবি সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে তাই হতাশাও বাড়ছে আমেরিকান বলয়ে।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র সর্বশেষ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বলেন, ‘তার সরকার দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |