প্রচ্ছদ সারাদেশ যাত্রীদের মারধরে চালক ও কন্ডাক্টরের মৃত্যু হয়নি, জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য

যাত্রীদের মারধরে চালক ও কন্ডাক্টরের মৃত্যু হয়নি, জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য

সারাদেশ: সাভারের আশুলিয়ায় নিজেই চালকের আসনে থেকে নিজেকে বাঁচাতে যাত্রীদের মারধরের গল্প সাজিয়েছেন সেই বাসের হেলপার। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে যাত্রীদের মারধরে চালক ও কন্ডাক্টরের মৃত্যু হয়নি। বরং আরেকটি বাসের চাপায় তাঁরা নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, সিসিটিভি ফুটেজ ও হেলপারকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। এই ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত সোমবার (৮ এপ্রিল) আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকায় নবীনগর–চন্দ্রামুখী মহাসড়কের লেনে ইতিহাস পরিবহনের এক বাস দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর একটি দূরপাল্লার বাস পাশ দিয়ে চলে যায়। এরপর বাসের গেট ঘিরে মানুষের ভিড়। যাত্রীরা যে যার মতো নামছেন। কিছুক্ষণ পর দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যান ইতিহাস পরিবহনের বাসটির চালক সোহেল রানা ও কন্ডাক্টর হৃদয়। তাঁদের সঙ্গে থাকা বাসের হেলপার আব্দুর রহমানের দাবি করেছিলেন, বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে যাত্রীরা তাঁদের মারধর করেন। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিলে তাঁদের মৃত্যু হয়। এ সময় আব্দুর রহমান প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুমন শেখ বলেন, গতকালকে আমি আমার পরিবারের লোকজনকে গাড়িতে তুলে দিতে আসি। এসময় দেখতে পাই, ইতিহাস বাসের গেটে দুজন ঝগড়া ও হাতাহাতি করছে। এরপর একটি বড় বাস তাঁদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এরপর তাঁদের নিচে রাস্তা পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর বাসের ভেতরে চালকের আসনে বসে থাকা কালো গেঞ্জি পরা এক লোক জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যান। পরে আহত দুজনকে উদ্ধার করে পুলিশ ও লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এদিকে নিহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন, সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানহ প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয় পুলিশের। ঘটনার সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

ঘটনার একদিন পর নিজেকে ওই বাসের হেলপার দাবি করা আব্দুর রহমান এবার সামনে নিয়ে এসেছেন ভিন্ন তথ্য। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তিনি পুলিশকে বলেন, ঘটনার সময় যাত্রীদের সঙ্গে তর্ক–বিতর্ক হচ্ছিল। তখন ড্রাইভার সোহেল রানা বাবু আমাকে গাড়ি চালাতে বলে ঝামেলা মেটানোর জন্য নিজেই গেটের কাছে আসেন। এ সময় সোহেল ও কন্ডাক্টর হৃদয় মিলে সড়ক থেকে যাত্রীদের ডাকছিলেন। বাড়তি ভাড়া নিয়ে ভেতরে যাত্রীর সঙ্গে তর্ক–বির্তকও চলছিল। এ সময় আরেকটি বাস গেটে থাকা বাবু ও হৃদয়কে ধাক্কা দেয়। তাঁরা রাস্তায় পড়ে যান। আমি ভয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে পালিয়ে যাই। একটু পরে আবার ফিরে এসে অনেকের সঙ্গে মিলে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাই।

নিহত কন্ডাক্টর হৃদয়ের ভাই আতিকুর রহমান বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখে ও লোকজনের কথা শুনে মারামারি হয়েছে কিনা তেমন বুঝতে পারিনি। শুনেছি, গাড়ি চাপা দেওয়া তারা মারা গেছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই। যারাই জড়িত হোক তারা যেন শাস্তি পায়।’

এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘আব্দুর রহমান নিজেকে বাঁচাতে যাত্রীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। আমরা যেটি পেয়েছি, প্রথমত গতকাল সাংবাদিকদের কাছে তাঁর যে বক্তব্য বা পুলিশ অফিসারের কাছে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাতে আমাদের খানিকটা সন্দেহ হয়। কেননা, তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী ১০ / ১২ কিংবা ১৫ জন মিলে বাস থেকে নামিয়ে দুই জনকে পিটিয়ে আহত করেছে। আহত করার পর তাঁদের হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের মৃত্যু হলে পুলিশ যখন সুরতহাল করে আরও অফিসারেরা যখন সেখানে যান, তখন ইনজুরি মার্ক (আঘাতের চিহ্ন) যে রকম থাকার কথা, সেই মার্ক বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। একজনের বুকে, অন্য জনের মাথার দিকে খানিকটা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ১০ থেকে ১২ জন মিলে কাওকে আঘাত করলে কিংবা পেটালে যেরকম ইনজুরি হওয়ার কথা সে রকমটি পরিলক্ষিত না হলে আমাদের সন্দেহ হয়।’

পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘পরবর্তীতে আমরা একজন প্রত্যক্ষদর্শীকে পাই, যিনি আমাদের জানান, এখানে আরেকটি বাস চলে এলে দুই জন দুই বাসের মাঝখানে চাপ খেয়েছেন। পরে তাঁদের হাসপাতালে নিলে সেখানে মৃত্য হয়। আমাদের হাইওয়ে পুলিশের র‍্যাকার কর্মকর্তা ওই বাসটি সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে গিয়েছিলেন, তাঁর বক্তব্যেও সেখানে মারামারি হয়েছে এরকম কোনো বক্তব্য পাইনি। আজ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অর্থাৎ বাসে যিনি ছিলেন তিনি নিজেকে বাসের হেলপার পরিচয় দিয়ে এই ঘটনাগুলো বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে আবারও আমরা কথা বলি। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি প্রাথমিক ভাবে এরকম বলেন যে, আসলে স্টিয়ারিংয়ে তিনি নিজেই ছিলেন। ওই সময় তিনি নিজেই বাস চালাচ্ছিলেন।

হেলপারের বরাত দিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ওই হেলপার বাস চালানোর একপর্যায়ে অন্য আরেকটি পরিবহন পাশ দিয়ে যায়। বাসটি মা–বাবার দোয়া—এরকম নাম আমরা ভিডিও ফুটেজে দেখেছি। বাসটি যখন ওভারটেক করতে যাচ্ছিল তখন তিনি (হেলপার) আগে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা করে বাম দিকে গাড়ি চাপান। তখন দুই জনের একজন বাসের পাশেই রাস্তায় ছিলেন, আরেকজন মনে হয় বাসের গেটের দিকে ছিলেন। বাসটি যখন জরুরি ভিত্তিতে বামে চাপাতে যান হেলপার, তখন অপর বাসের সঙ্গে ওই দুইজন ব্যক্তির ধাক্কা লাগে। তাঁরা চাপ খেয়ে পড়ে যান। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিক তদন্তে আমরা এতোটুকু পেয়েছি। ময়নাতদন্ত করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্ত শেষে যে রিপোর্ট ডাক্তারেরা দেবেন এবং আমাদের তদন্ত আরও বাকি রয়েছে। সব কিছু মিলে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব, আসলে কী ঘটেছিল।

প্রাথমিকভাবে গতকাল হেলপার আব্দুর রহমান যা বলেছেন তার সঙ্গে আজকের বক্তব্যের মিল নেই উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘ঘটনা ঘটার পর বাস থেকে লাফিয়ে তিনি পালিয়ে গেছেন। এটি প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য। আজকে তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে যে, যেহেতু দুইজন মারা গেছেন, হয়তো মামলা হতে পারে, জেল হতে পারে, শাস্তি হতে পারে, এ জন্য ওই ঘটনা বলেছেন তিনি। কারণ, তাঁর যে দুজন সঙ্গী ছিলেন, দুই জনই মারা গেছেন। আর এতো ব্যস্ত সড়কে হয়তো বিষয়টি কেউ খেয়াল করবে না, আর এভাবে বললে এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে—এমনটি ভেবেছিলেন তিনি। এটি প্রাথমিকভাবে তিনি স্বীকার করেছেন।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।