প্রচ্ছদ জাতীয় মুখোমুখি অবস্থানে বিএনপি জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা

মুখোমুখি অবস্থানে বিএনপি জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা

কুমিল্লায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে জেলার বিএনপি-জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখন মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছেন। একই আসনে বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন। এতে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে অস্থিরতা। ইসির নতুন সিদ্ধান্তে একাধিক ভিআইপি প্রার্থীর স্বপ্নও ভেস্তে যেতে পারে। এদিকে আসন পুনর্বিন্যাসের পর চলছে জটিল সমীকরণ। এতে সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বিএনপির মনোনয়ন লড়াই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন দেশের বেশকিছু সংসদীয় আসনে সীমানা পুনর্বিন্যাস করেছে। এতে কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে ৫টি আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। হঠাৎ এমন পরিবর্তনে জেলার একাধিক বিএনপির হেভিওয়েট মনোনয়নপ্রত্যাশী মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছেন। তবে ঘোষিত খসড়া অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কুমিল্লা-১ এবং কুমিল্লা-১১ আসনে দুজন বিএনপি-জামায়াতের হেভিওয়েট প্রার্থীর স্বপ্নভঙ্গ হতে পারে। ঘোষিত খসড়ায় কুমিল্লা-১ আসন পূর্বে দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলা নিয়ে ছিল। নতুন খসড়া অনুযায়ী, দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এতে মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া এবং দাউদকান্দি উপজেলার বাসিন্দা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন একই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদেরকে মাঝে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। এদিকে জামায়াতের ঘোষিত এমপি প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মোল্লাও মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা। তিনিও কুমিল্লা-২ আসনের পরিবর্তে কুমিল্লা-১ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।

গত সংসদ নির্বাচনেও কুমিল্লা-২ আসন ছিল মেঘনা হোমনা নিয়ে। এখন কুমিল্লা-২ আসন গঠিত হয়েছে হোমনা ও তিতাস উপজেলা নিয়ে। মেঘনার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

কুমিল্লা-৯ : লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ নিয়ে কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী আসন ছিল। বর্তমানে মনোহরগঞ্জ উপজেলাকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছে কুমিল্লা-১০ আসনের সঙ্গে। আর লাকসামের সঙ্গে ১০ আসনের লালমাই উপজেলা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বিএনপির একাধিক প্রার্থী কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি কর্নেল আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে সামিরা আজিম মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।

কুমিল্লা-১০ : এ আসনের ৩টি উপজেলা ভাগ করে ৩টি আসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আগে কুমিল্লা-১০ গঠিত ছিল সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে। এখন সদর দক্ষিণ ও লালমাই বাদ দিয়ে নতুন কুমিল্লা-১০ গঠিত হয়েছে নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে।

কুমিল্লা-১১ : কুমিল্লা-১১ আসন ছিল একমাত্র চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নিয়ে। এখন তাতে যুক্ত হয়েছে সদর দক্ষিণ উপজেলা। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা দলের হেভিওয়েট প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির এবং দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের অন্যতম নেতা ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, আসন পুনর্বিন্যাসে সবচেয়ে বেশি জটিলতা সৃষ্টি হবে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে। কারণ কুমিল্লা-১ আসনে জেলার বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া এখন মুখোমুখি হয়ে যেতে পারেন। তারপরে কুমিল্লা-১১ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের মুখোমুখি হয়ে যেতে পারেন। এসব বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।


এ বিষয়ে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, হোমনা-মেঘনা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ নির্বাচনী এলাকা ছিল এই জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। বিগত নির্বাচনেও এভাবেই চলেছে। এবার হঠাৎ করে মেঘনাকে দাউদকান্দির সাথে যুক্ত করা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসাবে দেখছে এলাকাবাসী। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাব। নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, যে নির্বাচনি এলাকার কারণে উপজেলা (সদর দক্ষিণ) হয়েছে, এটাকে তৃতীয়বারের মতো ষড়যন্ত্রকারীরা তিনভাগ করল। এটা জনগণের প্রতি জুলুম হয়েছে। তাই, আমি আইনি লড়াইয়ে যাব।