
রাজশাহীর ইয়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের পরিবারে নেমে এসেছে বিভীষিকা। গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার স্পার্ক ভিউ ভবনে বিচারকের বাসায় ঢুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় তার স্কুলপড়ুয়া ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে। গুরুতর আহত হন বিচারকের স্ত্রী তাসনিম নাহার। দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তাসনিম নাহার বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর একই বাসা থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সন্দেহভাজন ঘাতক লিমন মিয়াকে। হাসপাতালে শুয়ে তিনি দিয়েছেন এক চাঞ্চল্যকর বর্ণনা— দাবি করেছেন, বিচারকের স্ত্রী তাসনিম নাহারের সঙ্গে তার পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে লিমন বলেন, “উনার সাথে আমার পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক। কয়েকদিন আগে সিলেটে উনি আমাকে জেলে দিয়েছেন। এখন হঠাৎ করে আমাকে চিনতে পারছেন না। এতে আমি ট্রমায় পড়ে যাই।”
লিমনের দাবি, সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি তাসনিম নাহারের সঙ্গে দেখা করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ঘটনার দিন তিনি বাসায় গিয়ে তাকে গোলাপ, বাদাম ও পপকর্ন দেন। কিন্তু তাসনিম দরজা বন্ধ করে পুলিশে খবর দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন লিমন। এরপরই তিনি প্রথমে তাসনিম নাহারকে, পরে বাধা দিতে এলে সুমনকে ছুরিকাঘাত করেন বলে স্বীকার করেন।
পুলিশ জানায়, এর আগে ৬ নভেম্বর সিলেটের জালালাবাদ থানায়ও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন লিমন। বিচারকের মেয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন— তাকে দেখতে সিলেটে গিয়েছিলেন তাসনিম নাহার। সেই খবর পেয়ে লিমন সেখানেও গিয়ে হয়রানি শুরু করেন। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখনও লিমন একই দাবি করেন— তাসনিম নাহারের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে।
জালালাবাদ থানার ওসি শাহ মুবাশ্বিরের ভাষ্য— লিমনের আচরণ দেখে তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ মনে হয়েছে।
পূর্বে করা অভিযোগে তাসনিম নাহার উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে লিমনের সঙ্গে তার পরিচয়। লিমন নানা সময়ে তার কাছে টাকা দাবি করতেন। মানবিক কারণে কয়েকবার সহায়তা করলেও পরে টাকা না দিলে তিনি প্রাণনাশের হুমকি দিতে শুরু করেন।
তাসনিম বলেন, “উনাকে আমি অসহায় ভেবে কয়েকবার সাহায্য করেছি। ৭-৮ হাজার টাকা দিয়েছি। পরে টাকা দাবি করা শুরু করলে বুঝি বিষয়টি অন্যদিকে যাচ্ছে।”
রাজশাহীর রাজপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, “মামলা রেকর্ড হওয়ার পর আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।”
এ ঘটনায় শোকাহত পরিবার কথা বলতে রাজি হয়নি।










































