
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও মানবিক সংকটের মুখে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে একটি মানবিক করিডর খোলার প্রস্তাব দিয়েছে। এই করিডরের মাধ্যমে রাখাইনের ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এই করিডর বাংলাদেশের জন্য কেবল মানবিক চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি হতে পারে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন উৎস।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবিক করিডরের অভিজ্ঞতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জটিল ও সমস্যাজনক হয়েছে। যেমন:
সিরিয়ায় ২০২৩ সালে ভূমিকম্পের পর মানবিক করিডর খোলা হয়। কিন্তু তা দ্রুত বিদ্রোহীদের জন্য অস্ত্র সরবরাহ ও ঘাঁটি স্থাপনের রুটে পরিণত হয়। পরিণতিতে তুরস্ককে ৩০ লাখ শরণার্থী আশ্রয় দিতে হয়।
ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চলে জাতিসংঘের সহায়তায় খোলা করিডর পরিণত হয়েছিল লুটপাট, সশস্ত্র হামলা এবং অস্ত্র পাচারের কেন্দ্রে।
এই অভিজ্ঞতাগুলো দেখায়, মানবিক করিডর অনেক সময় রাজনৈতিক ও সামরিক রণনীতির অংশ হয়ে দাঁড়ায়। শুধুমাত্র মানবিক সহানুভূতির জায়গায় তা সীমাবদ্ধ থাকে না।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রাখাইনে মানবিক করিডর খোলা হলে তা আরাকান আর্মির জন্য সরবরাহের পথ হয়ে উঠতে পারে। এতে সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান বেড়ে যেতে পারে, বাড়তে পারে বিদ্রোহীদের অনুপ্রবেশ। একই সঙ্গে, নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, সহায়তা কার্যক্রমে তদারকি জটিল হলে বাংলাদেশকে দায় নিতে হতে পারে। এতে করে দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মানবিক করিডর আজকের বিশ্বে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ কৌশল, যার মাধ্যমে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে বড় শক্তিগুলোর স্বার্থে ব্যবহার করা হয়।
এখন দেখার বিষয়, সরকার এই প্রস্তাব নিয়ে কী ধরনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।