ধর্মীয়: ইসলাম ধর্মে কিবলা বলতে সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্যবস্তু বা দিককে বোঝানো হয়, যেদিকে মুখ করে মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন। আর কিবলা শব্দের দ্বিবচন হলো ‘কিবলাতাইন’ বা দুই কিবলা। মদিনা অঞ্চলে বর্তমানে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত মসজিদ আল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ।
ইতিহাস এবং হাদিসের আলোকে জানা যায়, হজরত মুহাম্মদ (সা.) নামাজ আদায়ের প্রত্যক্ষ নির্দেশ পান শবেমেরাজের সময় অর্থাৎ ৬২১ সালে। এরপর থেকে তিনিসহ সব মুসলমান জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদকে কিবলা গণ্য করে নামাজ আদায় করতেন। তবে তিনি ভাবতেন তার প্রিয় জন্মভূমি এবং হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক ইসলাম প্রতিষ্ঠার কেন্দ্র ভূমি কাবা বা মসজিদ আল-হারামের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলে আরও ভালো হতো। এজন্য তিনি প্রায়ই আকাশের দিকে চেয়ে দেখতেন এমন কোনো আদেশ ফেরেশতার মাধ্যমে আসে কি না।
পরবর্তীকালে হিজরতের পর মহানবী (সা.) ওহি বা কোরআনের বাণীর আলোকে (সুরা বাকারা আয়াত নম্বর ১৪৪) কিবলা পরিবর্তনের আদেশপ্রাপ্ত হন। এ আয়াতে রয়েছে যে, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কিবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব, যা আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, সেদিকে মুখ করো। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, পালনকর্তার পক্ষ থেকে এটাই ঠিক। তারা যা করে তা আল্লাহর অজানা নয়।’
পবিত্র কোরআনের এ বাণী জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে যখন এ মসজিদে পৌঁছে, তখন মসজিদের মুসল্লিরা মদিনার উত্তরে অবস্থিত জেরুজালেমের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করছিলেন। কিবলা পরিবর্তনের আদেশ পাওয়ায় নামাজরত ইমাম এবং অন্য মুসল্লিরা সঙ্গে সঙ্গে কিবলা পরিবর্তন করে মদিনার দক্ষিণে অবস্থিত কাবার দিকে মুখ করে অবশিষ্ট নামাজ আদায় করেন। এ ঘটনার পর থেকেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে ‘মসজিদ আল কিবলাতাইন’ বা দুই কিবলার মসজিদ হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে মসজিদটিতে দুটি ‘মেহরাব’ বা ইমামতির জন্য বর্ধিত অংশ ছিল। পরবর্তী সময়ে সংস্কারকাজ এবং মসজিদের আয়তন বৃদ্ধির সময় শুধু একটি মেহরাব রাখা হয়।
অনেকেরই মতে, মহানবী (সা.) আগমনের পর তথা ইসলামী যুগের শুরুতে তৃতীয় মসজিদ হিসেবে ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ নির্মিত হয়। বনি সালামা অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে এ মসজিদের প্রথম নাম ছিল মসজিদে বনি সালামা। অন্য তথ্যমতে, দ্বিতীয় হিজরি তথা ৬২৩ সালে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবারা সর্বপ্রথম মদিনা মুনাওয়ারার বনি সালামা অঞ্চল (বর্তমান খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়ক) সংলগ্ন স্থানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
সৌদি আরবের ‘দি আরব নিউজ’ সংবাদপত্রের ২০১৮ সালের ৩ জুন তারিখের এক প্রতিবেদনে উল্লিখিত যে, হিজরি দ্বিতীয় সালে সাওয়াদ বিন ঘানাম বিন কাব এ মসজিদ নির্মাণ করেন। পত্রিকা মতে, শাবান মাসের ১৫ তারিখে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইমামতিতে জোহর নামাজ আদায়ের সময় এ কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। তবে ঠিক কার ইমামতিতে বা কোন ওয়াক্তের নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) কর্তৃক ইসলাম প্রচারের ঊষালগ্নে প্রতিষ্ঠিত মদিনার এ মসজিদে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক নামাজ আদায়ের তথ্য উল্লিখিত আছে বিভিন্ন গ্রন্থে।
ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির আয়তন ৩ হাজার ৯২০ বর্গমিটার। গম্বুজ সংখ্যা দুটি, যার ব্যাস ৮ মিটার ও ৭ মিটার, উচ্চতা ১৭ মিটার। মিনার রয়েছে দুটি। বর্তমানে হাজিদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্য এই মসজিদ আল কিবলাতাইন।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত মেজর, গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |