
পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রধারী যুবক তুষার হোসেনকে (২১) অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার (১ ডিসেম্বর) গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ধানবান্ধি এলাকার জে.সি. রোডের মতিন সাহেবের ঘাট সংলগ্ন স্থান থেকে তাকে আটক করা হয়।
ডিবি পুলিশ জানায়, আধুনিক প্রযুক্তি, স্থানীয় সোর্স ও দীর্ঘ ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তুষারের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশিদুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই বেনু রায়, এসআই অসিত কুমার বসাকসহ একটি চৌকস টিম অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। তুষার ঈশ্বরদী পৌর শহরের ভেলুপাড়া মহল্লার তাহের হোসেনের ছেলে।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তুষার তার কাছে থাকা একটি অবৈধ পিস্তল ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেখানো মতে ভেলুপাড়া এলাকার মো. রবিউল ইসলামের ফাঁকা জমিতে, মো. আতিকের ইটের প্রাচীরের পশ্চিম পাশে মাটি খুঁড়ে প্রায় ৬-৭ ইঞ্চি নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় একটি লোডেড পিস্তল, ম্যাগাজিন ও দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
পাবনা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার তুষারের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে। সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে ঈশ্বরদী থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং সেখান থেকে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে বিকেল ৩টার দিকে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৭ নভেম্বর ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি আলহাজ মোড় এলাকায় জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল গণসংযোগ করতে গেলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের অনুসারী মক্কেল মৃধার নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। হামলা, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে জামায়াতের অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
সংঘর্ষ চলাকালে তুষার মণ্ডলকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে দেখা যায়, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয়। বিষয়টি এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব দাবি করেন, দিবালোকে তুষার মণ্ডল তাদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তিনি জামায়াত নেতা তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল বলেন, অস্ত্রধারী ওই যুবকের সঙ্গে তাদের দলের কারও কোনো সম্পর্ক নেই।
ঘটনার পর বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয় যেখানে ৭১ জনকে নামীয় ও চার শতাধিক অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। তুষারকে ২৯ নভেম্বর দায়ের হওয়া মামলায় ৬ নম্বর আসামি করা হয়। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা অস্ত্রের ঘটনায় অস্ত্র আইন ধারায় নতুন একটি মামলাও রুজু করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষ-পরবর্তী টানাপোড়েন এখনও কাটেনি। এলাকায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট












































