প্রচ্ছদ জাতীয় বাজেট সংশোধন শুরু ডিসেম্বরে, যুক্ত হবে নতুন পে-স্কেল কার্যকরের বিধান

বাজেট সংশোধন শুরু ডিসেম্বরে, যুক্ত হবে নতুন পে-স্কেল কার্যকরের বিধান

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রস্তাবিত নতুন পে–স্কেল বাস্তবায়নে বাড়তি অর্থের চাপ আসবে বটে, তবে রাজস্ব আহরণ বাড়িয়ে সেই চাপ সামলানো সম্ভব—এমন মত দিয়েছে অর্থ বিভাগ। দেশের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই তথ্য।

সম্প্রতি জাতীয় পে–কমিশনকে পাঠানো মতামতে অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, নতুন কাঠামোয় বেতন–ভাতা বাড়ানোর ফলে সরকারের ব্যয় যেমন বাড়বে, তেমনি চাকরিজীবীদের আয়ও বাড়বে। এতে ব্যয়ক্ষমতা ও পণ্য ক্রয়ের প্রবণতা বাড়বে, যা রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

অর্থ বিভাগের মতে, ২০১৫ সালের পর থেকে এক দশক ধরে বেতন–ভাতা বাড়ানো হয়নি। ফলে বর্তমান কাঠামো পুনর্বিন্যাস এখন সময়ের দাবি। এ কারণে বাড়তি অর্থের সংস্থান নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।

পে–কমিশন সূত্র জানায়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংকটের সময়েও চাকরিজীবীদের বেতন–ভাতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বেতন বৃদ্ধির হার শতভাগ পর্যন্ত হতে পারে। কারণ ২০১৫ সালের পর নতুন কোনো পে–কমিশন গঠন করা হয়নি। যদিও প্রতিবছর চাকরিজীবীরা ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পেতেন, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে বিশেষ করে নিম্ন বেতনধারীরা মারাত্মক আর্থিক চাপে আছেন। তবে বেতন দ্বিগুণ হারে বাড়লে সরকারের ব্যয়ও দ্বিগুণ হবে, যা সার্বিক অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে।

জাতীয় পে–কমিশনের সভাপতি ও সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। এর মধ্যেই সর্বোচ্চ হারে বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হবে।

সম্প্রতি অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা–কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন বেতন কাঠামো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গেজেট আকারে বাস্তবায়ন করা হবে; পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করা হবে না। ওই গণমাধ্যমকে অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য অর্থের বরাদ্দ দেওয়া হবে চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে। আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে নতুন পে-স্কেল যদি কার্যকর করতে হয়, তাহলে চলতি অর্থবছরের বাজেটেই সেজন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। বাজেট সংশোধন শুরু হবে ডিসেম্বরে, সেখানে নতুন পে-স্কেল কার্যকর করার বিধান যুক্ত করা হবে।

অর্থ বিভাগ জানায়, বাড়তি অর্থের সংস্থান দুটি উৎস থেকে আসতে পারে—চাকরিজীবীদের বাড়িভাড়া ও আয়কর। নতুন কাঠামোয় সর্বনিম্ন বেতন ৮,২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকার বেশি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সর্বনিম্ন বেতনধারীরাও আয়করের আওতায় আসবেন। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।

এছাড়া সরকারি বাসাবাড়ির ভাড়ার হার সমন্বয় করা হলে সেখান থেকেও রাজস্ব বাড়বে। ফলে বেতন–ভাতা বৃদ্ধির প্রভাবে শুধু ব্যয় নয়, রাজস্ব আদায়ের পরিধিও সম্প্রসারিত হবে—এমনটাই মনে করছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগের মতামতে আরও বলা হয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সময় বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পথে। এ প্রেক্ষাপটে দক্ষ ও মেধাবী জনবল সরকারি প্রশাসনে টানতে হলে প্রতিযোগিতামূলক ও সময়োপযোগী বেতন কাঠামো অপরিহার্য।

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর নতুন কাঠামো প্রণয়নে পে–কমিশনের কাজ এগিয়ে চলছে। অনলাইনে চারটি প্রশ্নমালার মাধ্যমে প্রাপ্ত মতামত ও সুপারিশ যাচাই–বাছাই চলছে। বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতি ইতিমধ্যে নিজেদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। কমিশন আশা করছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত সুপারিশ সরকারকে পেশ করা সম্ভব হবে।