প্রচ্ছদ রাজনীতি বাঙলা কলেজের ছাত্রই নন, তবুও ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি

বাঙলা কলেজের ছাত্রই নন, তবুও ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি

রাজনৈতিক: দীর্ঘ ৮ বছর পর রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ফয়েজ আহমেদ নিজু সভাপতি ও মো. রুবেল হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এ কমিটি ঘোষণা করেন।

কমিটি ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। দেখা দিয়েছে নানা বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেউই বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী নন।

যদিও ফয়েজ আহমেদ বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সে সময় তিনি তৎকালীন সভাপতি মুজিবুর রহমান অনিকের রাজনীতি করতেন। অভিযোগ ছিল, অনিক তার দল ভারী করার জন্য ফয়েজকে বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে সে সময়ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফয়েজ আহমেদ ২০১১-১২ সেশনে রাজধানীর মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতক করেছেন। ২০১৬ সালে তার স্নাতক চতুর্থ বর্ষের (অনিয়মিত) পরীক্ষার রোল নম্বর ছিল ৬১২৩০৮৬ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল ২১৮৬০৫২।

এখানেই শেষ নয় ফয়েজের একাধিক জুয়া খেলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি একটি ঘরের মেঝেতে বসে জুয়া খেলছেন। এ সময় তাকে টাকা গুনতেও দেখা যায়।

অপরদিকে কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত মো. রুবেল হোসেন নিজেকে বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হিসেবে পরিচয় দিলেও বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুজিব রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান মিয়া জীবনের ওই কমিটির তালিকা খুঁজে তার নাম পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত ওই কমিটির ২১ জন সহসভাপতির মধ্যে রুবেল হোসেন নামের কেউ নেই।

এ ছাড়া রুবেল হোসেন বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীও নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসএস ডিগ্রিতে পড়ছেন। তার দ্বিতীয় বর্ষের রোল নম্বর ১৬২০০৪৭৩৩, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৬১৫৩০০০৬৪৫৭। রুবেল হোসেন দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় ৩টি সাবজেক্টে পাস করেছেন এবং ৩টি সাবজেক্টে ফেল করেছেন। ফল প্রকাশ হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে। এরপর তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় তিনি ইংরেজিতে ফেল করেন এবং আর একটি বিষয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলাফল প্রকাশ হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে। এরপর ইমপ্রুভমেন্ট দিলেও তিনি পাস করতে পারেননি বলে জানা গেছে।

কিন্তু ছাত্রলীগের দপ্তর সেল থেকে রুবেল হোসেনের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে দেখা যায়, রুবেল হোসেন সেখানে নিজেকে মাস্টার্স শেষ বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নিজের ছাত্রত্ব প্রমাণের জন্য জীবনবৃত্তান্তের সঙ্গে একটি প্রত্যয়নপত্রও জমা দিয়েছেন তিনি। যেখানে রোল নম্বর উল্লেখ করেছেন 37431 এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করেছেন ৬১৫৩০০০৬৭৬৭। তবে বাঙলা কলেজে এই রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বরে কোনো শিক্ষার্থীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

২০১৭-১৮ সেশনের মাস্টার্সের ১২৪ জন শিক্ষার্থীর সব তথ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সংগ্রহ করে কালবেলা। ওই সেশনের ১২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে রুবেল হোসেন নামের কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও তার প্রত্যয়নপত্রের স্বাক্ষরটি কলেজ অধ্যক্ষের নয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নবনির্বাচিত সভাপতি ফয়েজ আহমেদের মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। আর সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন মোবাইল ফোনে গতরাতে কমিটির বিষয়টি স্বীকার করলেও অভিযোগের বিষয়ে কালবেলার প্রতিবেদক প্রশ্ন করলে ফোন কেটে দেন তিনি।

ছাত্র না হয়েও কীভাবে ঐতিহ্যবাহী বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে জায়গা হলো তাদের, তা জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের মোবাইল ফোনে ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। এমনকি তাদের হোয়াটসঅ্যাপে এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে তাতেও তারা কোনো মন্তব্য করেননি।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।