প্রচ্ছদ সারাদেশ বন্ধুর পরিকল্পনায় এমপি আনার খুন, মিশন শেষে দেন পার্টি

বন্ধুর পরিকল্পনায় এমপি আনার খুন, মিশন শেষে দেন পার্টি

সারাদেশ: ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ছোটবেলার বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীনের ষড়যন্ত্রে ভারতের কলকাতার একটি বাড়িতে তাকে খুন করা হয়। শুধু তাই নয় কিলিং মিশন শেষে পার্টিও দেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সমকালের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী এবং পেশায় ঠিকাদার। দেশে তার কয়েকশ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ চলছে। এরই মধ্যে শাহীনের ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে একটি ডায়েরি জব্দ করা হয়েছে। সেখানে ভাড়াটে খুনির কাকে কত টাকা দিয়েছেন, সে হিসাবও আছে। ভারত থেকে দেশের ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছেন শাহীন। তিনি এখন সেখানে অবস্থান করছেন বলে তথ্য মিলেছে।

হত্যাকারীর নাম-পরিচয় সামনে আসার আগেই গেল সোমবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশ ছাড়েন মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন। তিনি ভিস্তেরা এয়ারলাইন্সে দিল্লি ও কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। একাধিক সূত্র বলছে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শাহীনের বাড়ি রয়েছে। হত্যা মিশন শেষে সেখানে একটি পার্টিও দিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, এমপি আজীমকে খুনের জন্য পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে কিলার ভাড়া করা হয়। এদিকে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া ভারতে দু’জনকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সেখানকার পুলিশ। ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই কলকাতার অভিজাত এলাকা নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটের খোঁজ মেলে।

যেভাবে খুন করা হলো আনোয়ারুলকে

গ্রেপ্তারকৃতদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ১২ মে আনোয়ারুল আজীম ভারত যাবেন এই বিষয়টি আগেই জানতেন শাহীন। তাকে হত্যার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেন তার দলকে। তারা একাধিক চাপাতিও সংগ্রহ করে রাখেন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ১২ মে আনোয়ারুল আজীম ভারত গিয়ে মণ্ডলপাড়ার স্বর্ণ কারবারি বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় উঠেছিলেন। ১৩ মে ঘটনার দিন গোপালের বাসার থেকে বের হওয়ার পর কলকাতায় প্রথমে একটি সাদা গাড়িতে আনোয়ারুলকে তুলে নেয় এক ব্যক্তি। সেখানে গাড়ি চালক, এমপিসহ তিনজন ছিলেন। এরপর কিছুদূর যাওয়ার পর সেই গাড়ির থেকে নেমে লাল আরেকটি গাড়িতে ওঠেন এমপি। ওই গাড়িতে ছিলেন আজীমের ছোটবেলার বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীনের বেয়াই সৈয়দ আমানুল্লাহ। তিনি এমপির পূর্বপরিচিত। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুই দেশের গোয়েন্দারা বলছেন, ১৩ মে দুপুর পৌনে ১টার দিকে এমপিকে বহনকারী লাল গাড়িটি কলকাতার অভিজাত এলাকা নিউ টাউনের আবাসিক ভবন সঞ্জীবনী গার্ডেনে ঢোকেন। বিকেল ৫টা ১১ মিনিটের দিকে এমপির জুতা ও পলিথিনের দুটি বড় ব্যাগ হাতে নিয়ে ওই বাসা থেকে আমানুল্লাহ ও কিলিং মিশনের আরেকজন বেরিয়ে আসেন। গ্রেপ্তারের পর আমানুল্লাহ বলেন, কৌশলে সংসদ সদস্যকে আবাসিক ভবনে নিয়ে সিয়াম, ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদ মিলে চাপাতির মুখে আজীমকে জিম্মি করা হয়। এক পর্যায়ে সংসদ সদস্যকে শাহীনের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য কড়া ভাষায় ধমক দেয়া হয়। এ নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হলে বালিশচাপা দিয়ে আজীমকে হত্যা করা হয়।

লাশের টুকরো ব্যাগে ভরে গায়েব করা হয়

পুলিশের জেরায় গ্রেপ্তার তিনজন স্বীকার করেন, কলকাতার যে ফ্ল্যাটটিতে তারা ছিলেন, সেখানেই নৃশংসভাবে খুন করা হয় আজীমকে। এরপর লাশ টুকরো টুকরো করে চারটি ব্যাগে ভরে গায়েব করা হয়। পরে ওই তিনজন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১৪ মে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যায় হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেকটি গ্রুপ।

খুন করতে ৫ কোটি টাকার চুক্তি

গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আমান জানিয়েছে, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর। হত্যার পর ঢাকায় এসে শাহীনের সঙ্গে দেখা করেন আমানুল্লাহ। ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরে বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।