দেশজুড়ে: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে তার ওপর হামলা হয়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
আবদুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি নগরের বুধপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন।
জানা গেছে, শনিবার রাতে নবজাতক শিশুর জন্য ওষুধ কিনতে গিয়ে নগরীর বিনোদপুর এলাকায় তার ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে। পরে মতিহার ও বোয়ালিয়া থানায় নেবার পর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেলে নেয়া হয় মাসুদকে। সেখানেই গভীর রাতে মারা যান তিনি।
২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আবদুল্লাহ আল মাসুদ। এ সময় মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাঁ পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেয়া হয়েছিল তার হাতের রগ।
পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়া হয় তাকে। তার এমন মৃত্যুর পর এতিম নবজাতক ও স্ত্রী অমানিশার ঘোর অন্ধকারে পড়েছেন।
লাশ কাটা ঘরের সামনে বোনের সঙ্গে ফুটফুটে এক শিশুকন্যা নিয়ে বসে আছেন বিউটি আরা। দুদিন আগেই মিশন হাসপাতাল থেকে সিজারের সেলাই নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় স্বামী আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক জুবেরি ভবনের দুই কক্ষের কামরায়। গত রাত সাড়ে ৭টার দিকে শিশুটির জন্য ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন বিনোদপুর বাজারে। সেই যে গেলেন, আর ফিরে আসেন নি। বললেন দেড় বছর আগে দুই পরিবারের অমতেই বিয়ে করেছিলেন তারা। এখনও সে সম্পর্ক ঠিক হয়নি।
নিহত মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা গভীর রাতে তার মৃত্যুর খবর শুনে মুষড়ে পড়েন। চারদিনের এই শিশু সন্তান নিয়ে পড়েছেন অথই দুঃখের সাগরে। নিহত মাসুদের স্ত্রী বিউটি বলছেন, মেয়ের নাম মাসুদের সঙ্গে মিলিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন মাসুমা। এখন আমার আর মেয়ের দায়িত্বকে নেবে? শোকে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তার।
মরদেহ নিতে মর্গে এসেছেন মাসুদের মামা ও আত্মীয়রা। পরিবারের সদস্যদের দাবি রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকতে পারে। এক পা না থাকা একটি পঙ্গু মানুষ কিভাবে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাবে? এটি তারা বুঝতে পারছেন না।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, রাত পৌনে ১১টার দিকে তারা অসুস্থ অবস্থায় মাসুদকে পেয়েছেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে আপাতত মনে করা হচ্ছে শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম এবং অসুস্থতা ও গণপিটুনির কারণেই হতে পারে। তবে বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, নিহতের পরিবার থেকে মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মানুষ যাতে করে এই ভাবে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় তার জন্য দ্রুত ছাত্র জনতার সঙ্গে বসে বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, রাতে আহত অবস্থায় আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে কয়েকজন ধরে থানায় নেবার চেষ্টা করছে। সেখানে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদেরও ছবিতে চিহ্নিত করা গেছে। তবে এই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, এমন প্রশ্নে সমন্বয়করা বলেন, এই ঘটনাতে তারা ছিলেন না। থানায় অন্য দুজনকে ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করার সময় মাসুদকে এখানে নেয়া হয়। যারাই এমন ঘটনা ঘটাক সমন্বয়করা এটি সমর্থন করেন না বলেও সাফ জানিয়েছেন। এ ঘটনার বিচার তারাও দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার।
প্রসঙ্গত, শনিবার নবজাতক শিশুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে মাসুদ লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। গত ৩-৯-২০২৪ তারিখে কন্যাসন্তানের পিতা হয়েছি। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করি। সব আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধুবান্ধবের কাছে আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |