প্রচ্ছদ জাতীয় নারী সমকামীতা বিষয়টি শুনেছি হয়তো কিন্তু এমন ভয়াবহভাবে প্রত্যক্ষ করিনি

নারী সমকামীতা বিষয়টি শুনেছি হয়তো কিন্তু এমন ভয়াবহভাবে প্রত্যক্ষ করিনি

কিসের বা*লের ক্যাডার ? ক্যাডার একজনরই মানি -আমগো কালা সেকান্দার !!!

কয়েদী রুমে আমার প্রথম দিন। একটি রুমে আটত্রিশ জন কয়েদীর বাস,প্রত্যেকের জন্য প্রস্থে এক হাত ও লম্বায় সাড়ে দুই হাত স্থান বরাদ্দ! কারাগারের ভাষায়, চার ভাঁজের বিছানা অর্থাৎ একটি কম্বলকে লম্বায় চার ভাঁজ করলে যতটুকু জায়গা হয় ঠিক কতটুকু !!! কয়েদী রুমে আমি ছাড়া প্রায় প্রত্যেকে ত্রিশ বছরের কয়েদী – তার মধ্যে আশি ভাগ মার্ডার মামলা , বাকী বিশ ভাগ হেরোইন নামক মাদক !!!

আমার মতো ৪২০ মামলা নিয়ে কয়েদী হবার দুর্লভ দুর্ভাগ্য কেউ অর্জন করেনি !!! এজন্য স্বভাবতই , এই ওয়ার্ডে কেউ আমাকে বিশেষ পাত্তা দিলনা, কারও কারও মুখ আবার প্যাঁচার মতো হয়ে গেল রুমে আরও একজনের সংখ্যা বাড়লো বলে ! আমার ঠাঁই মিলল একেবারে কোনায় যেখানে নিকটবর্তী ফ্যানটির সামান্যতম বাতাসও পৌঁছায় না !!! দেয়াল টা ভিজে ওঠায় দিনরাত চুনের গুঁড়া খসে পরছে !

আমাকে দেখে কয়েদী রাশিদা খালা এগিয়ে এসে জোড় করে আমার হাত থেকে কাপড়ের ব্যাগ দুটো নিয়ে নিলেন!! কম্বলের উপর চাদর পেতে আমার জন্য বিছানা করতে শুরু করলেন ! হাত দিয়ে ভাত চটকে দেয়ালে খবরের কাগজ সেটে চুনের গুড়া আটকাবার চেষ্টা করছেন এমন সময় দুজন কয়েদী এগিয়ে এলো !

তাদের হাবভাব আর হেটে আসার স্টাইল তামিল ছবির ভিলেনদের মতো !!! এরা দুজনই হেরোইন মামলায় যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামী !! দুজনেরই দুই হাত ফালি ফালি করে কাটা ! এরা অভিনব কায়দায় জিহ্বার নিচে ব্লেড রাখে , হঠাৎ মাল ডেলিভারী দেবার সময় পুলিশ ধাওয়া করলে আচমকা ব্লেড বের করে নিজের হাতে নিজেই পোচ দেয়, আকস্মিক গলগল করে বেরিয়ে আসা রক্ত দেখে পুলিশ কিছুটা হতচকিত হয় ! এই সুযোগে তারা পগারপার হয় !!

যাই হোক দুজনেই বোধহয় মাত্র জর্দার বিরি টেনে এসেছে, শরীর থেকে জরদা মেশানো ঘামের বিটকেলে ভ্যাপসা গন্ধ আসছে- হেরে গলায় একজন আমার বিছানার দিকে ইশারা করে সবার দিকে চোঁখ রাংগিয়ে জিজ্ঞেস করলো , “এইটা কোন বান্দির ঘরের বান্দির বিসনা, কে বিসনা করসে ? জবান বন্ধ ক‍্যান- জবাব দে -নাইলে লাথথি দিয়া কোমর ভাঙমু অক্ষনি !!!”
প্রথমে বুঝতেই পারিনি কাহিনী কি ? পরে বুঝলাম, রাশিদা খালা প্রচলিত মাপের চেয়ে চার আংগুল বড় করে আমার বিছানা পেতেছে ! “থাম তোরা , হে একটু বড় জায়গা নিসে তো তোগো চুলকায় কেন ???সে একটা বিসিএস ক্যাডার ! “রাশিদা খালাও সমান চেচিয়ে ওঠে ! “

“কিসের বালের ক্যাডার হে ?? ক্যাডার একজনরই মানি – আমগো এলাকার কালা সেকান্দার !!!”
দুপক্ষে তুমুল গালাগালি কামানের গোলাগুলির মতো চলতে থাকলো – শেষ পর্যন্ত অবশ্য আমাকে চার আংগুল বেশি জায়গা দেবার পক্ষে যারা তাদের জয় হলো কারন, বেশিরভাগ কয়েদী কেন জানিনা,আমাকে স্নেহের চোখে দেখত।

সেই রাতে কম্বলের উপর শুয়ে ছটফট করছি, প্রচন্ড গরম ! এক ফোঁটা বাতাস কোথাও নেই !!! মাথার উপর ফ্যান নেই কিন্তু অতি উজ্জ্বল বাতি জ্বলছে! কারাগারে বাতি নেভানোর নিয়ম নাই ! বাতির কারনে জড়ো হচ্ছে রাজ্যের পোকা, নিরবিচারে নির্বিচারে সেই পোকা গায়ে বসছে !!! সেই সাথে আছে চড়ুই পাখি সাইজের কাশিমপুরের সু -বিখ্যাত মশার কামড় !গরমের কারনে গায়ে চাদর বা কাথা দেয়া যায়না আবার না দিলে পোকা আর মশার বাহিনী পূর্ণ শক্তিতে ঝাপিয়ে পরে !!!!

আমার কষ্ট দেখে রাশিদা খালা গামছা ভিজিয়ে এনে আমার শরীরে জড়িয়ে দিলো !!! প্রাণপনে সব ভুলে চোখ বন্ধ করে কল্পনা করি আমি আমার চিরচেনা এসি রুমে শুয়ে আছি , এই কয়েদী রুমটা সত্য না -এই অপার্থিব গরম, এই রক্তচোষা মশা,এই পোকা এসবই মিথ্যে- ঘুমুতে চেষ্টা করি !!

চোখটা লেগে এসেছে , এমন সময়ে নাভিমূলে একটা বিশেষ ধরনের স্পর্শ পেয়ে আধো ঘুমে আধো জাগরনে চমকে উঠি ! চোখ মেলে দেখি মুখের উপর খুব কাছে ঝুঁকে একটা মুখ ! চোখের সেই কামুক দৃষ্টি কৈশোর পেরোনোর পর থেকেই কোন মেয়ে চিনতে ভুল করে না ! এ কিভাবে সম্ভব ????সে তো নিজেই একজন নারী !!

ভয়ে , আতংকে, ঘেন্নায় এক ধাক্কায় তাকে সরিয়ে লাফ দিয়ে বসার সাথে সাথে দেখি রাশিদা খালা ঐ নারীর চুলের মুঠি ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ধুমাধুম কিল ঘুষি বসিয়ে দিচ্ছে !!!
“বদমাইশ মাগী , তুই আবার শুরু করসশ ????”

সাথে যোগ হয় আরও অন্য কয়েদীরাও !!! আমার শিরশিরে অনভূতি এখনও যায়নি – এখনও অনুভব করছি আমার শরীরে তার কিলবিলে আংগুল! বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটছে !
নারী সমকামীতা বিষয়টি শুনেছি হয়তো কিন্তু এমন ভয়াবহভাবে প্রত্যক্ষ করিনি ! ঐ নারীটি ষোল বছর ধরে কারাগারে আছে , যখন কারাগারে এসেছে তখন তার বয়স মাত্র চব্বিশ বছর, বিবাহিতা -দুটি সন্তানের মা।

সে মোটেই প্রকৃত সমকামী নয় কিন্তু সুদীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার ফলে অতৃপ্ত প্রবল শারীরিক আকাংখা আর অবদমিত কামনা থেকেই তার এই মানসিক বিকৃতি ঘটেছে !!
যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম ঘৃণার বদলে তিব্র কষ্ট হতে লাগল ….!!!! পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষকে গড়ে আবার কখনও পরিবেশ পরিস্থিতিই ধ্বংস অনিবার্য করে তোলে !!

পুনশ্চ : রাশিদা খালা নিজের চারটি সন্তানকে পুড়িয়ে মারার অপরাধে একশ বিশ বছরের সাজা প্রাপ্ত হয়েছিলেন ! সবাই জানতো যে ,তার নিজের সন্তান মেরে ফেলতে পারে তার মনে মায়া বলে কোন বস্তু নেই ! অথচ এই রাশিদা খালা প্রবল মাতৃ স্নেহে যতদিন আমি কয়েদী ওয়ার্ডে ছিলাম ততদিন আমাকে আগলে রেখেছিলেন !!! আমি ঘুমালে উনি আমাকে পাহারা দিতেন , হাতপাখার দিয়ে বাতাস করতেন , ঘুমাবার আগে বেনী বেঁধে দিতেন !! প্রকৃতি সত্যি বড় অদ্ভুত !!!!!