প্রচ্ছদ জাতীয় দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন

দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন

নারায়ণগঞ্জে ২১ জন শহীদের নামে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৫ উপদেষ্টা। তারা হলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে উল্লেখ করা ২১ জন শহীদ হলেন রিয়া গোপ, মো. রোমান, আরমান মোল্লা, মো. ইরফান ভূইয়া, মো. তুহিন, মো. মোহসীন, মো. জনি, ইব্রাহিম, মো. স্বজন, মো. আদিল, পারভেজ হাওলাদার, মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া, সোলেমান, ইমরান হাসান, হযরত বিল্লাল, সফিকুল, মো. সজল, মো. মাবরুর হুসাইন, মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান খান, মোহাম্মদ সাইফুল হাসান ও আহসান কবির।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘জুলাই মাসের আন্দোলনে গত সাড়ে ১৫ বছরের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার উৎখাত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন এবং সাড়ে তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আমরা শ্রদ্ধাভরে নারায়ণগঞ্জবাসীর অবদানের কথা স্মরণ করি।’

সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে নানাভাবে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির ঘটনা ঘটছে।

ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটছে। চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। জুলাইয়ে আপনারা যে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করেছিলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে চাঁদাবাজদের প্রতিহত করতে পারবেন। স্থানীয়ভাবে চাঁদাবাজ আছে, লুটেরা আছে; তাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
প্রশাসন সহযোগিতা করবে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের দৃঢ়কণ্ঠে জানাতে চাই, বিচার পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলেছে। কোনো রকম গাফিলতি থাকবে না। যে গতিতে বিচার এগিয়ে চলেছে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ সরকারের শাসনামলেই এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।’

উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গণভবনকে একটা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাদুঘর গড়ে তুলার জন্য কাজ করছে। ৫ আগস্টের আগেই এটার উদ্বোধন করা হবে। এটা স্বৈরাচারের ঠিকানা। আমরা এই ঠিকানাকে সংরক্ষণ করতে চাই। দেখাতে চাই এখানে ফ্যাসিবাদ কিভাবে মানুষকে অত্যাচার করত। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি শহীদদের সব কবর সংরক্ষণ করার জন্য। আমরা কাজগুলো শেষ করতে চাই। বাংলাদেশে যেন কখনো কোনো আধিপত্যবাদী শক্তি চোখ রাঙাতে না পারে। ফ্যাসিবাদ না আসতে পারে। যদি আসার চেষ্টাও করে, সেটাকে দমন করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুঁজিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের সংগ্রাম চালিয়েছে। এই সংগ্রামে বহু মানুষ গুম হয়ে যায়। বিচার বহির্ভূত নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। অনেক আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছিল। এই সংগ্রামের এক পর্যায়ে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ছাত্ররা বৈষ্যম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে এবং অগ্নিকন্যারাও নেমে এসেছিলেন রাজপথে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, বৈষম্যমুক্ত করেছে। তাদের ত্যাগের মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত দেশ পেয়েছি। এই জুলাইকে স্মরণ করে আজ আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। জুলাইকে আমাদের সবসময় স্মরণ করতে হবে। এই নারায়ণগঞ্জে ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন। বুলেটের সামনে সেদিন তারা বুক পেতে দিয়েছিল। আর এই ৫৬ শহীদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সন্তান ছিল ২১ জন। তাদের স্মরণে এবং তাদের পরিবার যে এত বড় আত্মত্যাগ করেছে তার স্মরণে আজ নারায়ণগঞ্জে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। তারা একটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জীবন দিয়েছিল। আর সেই উদ্দেশ্য হলো বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তাদের শ্রদ্ধা করার একটি উপায় হচ্ছে দোষীদের বিচার কাজ নিশ্চিত করা। আর যেন বাংলাদেশের সরকার, বাংলাদেশের কোনো বাহিনী নিজ দেশের মানুষের ওপর গুলি চালাতে না পারে। আমরা এই বিচার প্রক্রিয়া সামনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’