
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য কেন ২৫ ডিসেম্বর বেছে নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এক ফেসবুক পোস্টে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও আয়োজন ঘিরে নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
ফেসবুক পোস্টে মাহদি আমিন লিখেছেন, দেড় যুগ পর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার হয়েছে। এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং সর্বজনীন প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার মেলবন্ধন, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের সম্ভাবনা।
১. একই ফ্লাইটে তারেক রহমানের সঙ্গে পরিবারের কারা ফিরছেন? তারেক রহমানের সঙ্গে একই ফ্লাইটে দেশে ফিরছেন তার সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান ও কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান।
২. তারা কখন ঢাকা পৌঁছাবেন? তারেক রহমানকে বহনকারী ফ্লাইটটি সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। অবতরণের পরপরই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ও প্রটোকল ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা হবে।
৩. দিনের কর্মসূচি কী কী? তারেক রহমানের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হলো সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তার গুরুতর অসুস্থ মমতাময়ী মা, বাংলাদেশের অভিভাবক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া। তবে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে, যাত্রাপথের মাঝামাঝি রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় তিনি অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দেশবাসীর উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন। সেখান থেকে হাসপাতালে গিয়ে দেশনেত্রীর পাশে থাকবেন ও সেখান থেকে সরাসরি গুলশানে নিজ বাসায় যাবেন।
৪. ঢাকায় অনেক ঐতিহাসিক স্থান থাকা সত্ত্বেও ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) কেন বেছে নেওয়া হলো? এই স্থান নির্বাচনের পেছনে রয়েছে একটি সুস্পষ্ট কৌশলগত ও মানবিক সিদ্ধান্ত, তথা জনদুর্ভোগ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা। তারেক রহমানের নির্দেশনা প্রতিপালন করতে গিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় ও ঐতিহাসিক স্থান যেমন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা মানিক মিয়া এভিনিউ ইচ্ছাকৃতভাবেই কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে। পরিবর্তে রাজধানীর একপাশে, সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দীর্ঘ ও প্রশস্ত সড়ক, যেটি শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে বহু দূরে, সেই ৩০০ ফুট প্রশস্ত ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’-এর শুধু এক পাশের সার্ভিস লেনকে অতি সংক্ষিপ্ত গণঅভ্যর্থনাস্থল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
৫. এটি কি কোনো সংবর্ধনা? না, এটি কোনো জনসভা বা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নয়, শুধু দেশবাসীর প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং দেশনেত্রীসহ দেশের সব মানুষের কল্যাণ কামনায় দোয়ার অনুরোধের একটি সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি। এই আয়োজনে তারেক রহমানই একমাত্র বক্তা। এখানে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে দল-মত নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন, প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার আশায়।
৬. জনভোগান্তি কমাতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? জনদুর্ভোগ কমাতে ঢাকাজুড়ে ২০টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, প্যারামেডিক, ওষুধপত্র ও অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পগুলোর তালিকা জনসাধারণের সুবিধার্থে প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া বক্তব্যস্থলের কাছাকাছি ৬ শয্যার একটি অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতাল থাকবে, যার সঙ্গে আইসিইউ সুবিধাসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স সংযুক্ত থাকবে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, সর্বত্র মোবাইল টয়লেট স্থাপন ও কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত থাকবেন।
৭. বিদেশগামী ও স্বদেশফেরত যাত্রীদের চলাচল, যানজট ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, রোগী পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স এবং অন্যান্য জরুরি যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? যানজট এড়াতে রাজধানীতে প্রবেশের প্রধান পয়েন্টগুলোতে আলাদা বাস পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরগামী ও বিদেশফেরত যাত্রীদের পাশাপাশি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে কাকলী মোড়, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে এবং আব্দুল্লাহপুরে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে। এসব ডেস্ক থেকে মোটরবাইক এসকর্টের মাধ্যমে জরুরি যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। তারপরও কোনো অনিচ্ছাকৃত সমস্যার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে নগরবাসীর কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করা হচ্ছে।
৮. ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিই কেন নির্বাচন করা হলো? জনভোগান্তি পরিহারের লক্ষ্যেই তারেক রহমান তার প্রত্যাবর্তনের দিন হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ২৫ ডিসেম্বর নির্বাচন করেছেন। এই দিনের পরপরই আরও দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় মোট তিন দিনের টানা ছুটি থাকবে, যা নাগরিক চাপ ও যানজট কমাতে সহায়ক হবে।
৯. এই কর্মসূচিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের জন্য কোনো নির্দেশনা আছে কি? এই প্রত্যাবর্তন যেন কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলা, উত্তেজনা বা নাগরিক দুর্ভোগের কারণ না হয়, সেই বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সকল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ আচরণ, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে অপেক্ষমাণ দেশের সব প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের রাজধানীমুখী স্বতঃস্ফূর্ত স্রোত সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই, বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে কাঞ্চন ব্রিজ ও ঢাকার প্রবেশমুখগুলো ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১০. এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী? বহুলআকাঙ্ক্ষিত এই প্রত্যাবর্তনকে অনেকেই দেখছেন বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতিতে জনগণের ঐক্য সৃষ্টি এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে। সে কারণেই তারেক রহমানের ফেরা কেবল একটি ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়; বরং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের গভীর আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।









































