
দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সংবলিত জুলাই সনদ অবশেষে স্বাক্ষরিত হলো।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরের এই আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে স্বাক্ষর করেছেন।
সনদটিতে সই করার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘উদাহরণ হয়ে থাকবে’।
তবে, সনদটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে অনেক প্রশ্নও তুলছেন।
কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, ‘প্রায় শতভাগ মুসলমান একটি দেশের জাতীয় সনদের কোথাও বিসমিল্লাহ লেখা নেই।’ আবার কারও দাবি, ‘সনদটিতে ধর্মীয় মূল্যবোধকে উপেক্ষা করা হয়েছে।’
এসব প্রশ্ন ও অভিযোগ প্রসঙ্গে শনিবার (১৮ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে কথা বলেছেন প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ।
তিনি বলেন,‘জুলাই সনদে অনেক সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পেছনে মাদ্রাসা ছাত্রদের ভূমিকা, ধার্মিকদের ভূমিকা, বিশেষ করে আখিরাতে বিশ্বাসী মানুষের ভূমিকা, ধর্মীয় মূল্যবোধের বিশেষ ভূমিকা, আল্লাহর জন্য প্রাণ দেওয়ার প্রেরণা— এগুলোর যে ভূমিকা ছিল সেটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার এবং স্পষ্ট। এরপরও এই সনদের কোথাও সেই বিষয়গুলোকে তুলে আনা হয়নি।’
‘অথচ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি দীর্ঘদিন পর্যন্ত যে অনাচার এবং অবিচার চলে এসেছে, তার ফলশ্রুতি জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেছে।’
আহমাদুল্লাহর ভাষায়, ‘ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি যে জুলুম-নিপীড়ন ছিল, জুলাই আন্দোলনে সেটার যে একটা ভূমিকা ছিল, সে বিষয়টি এখানে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুসলিমপ্রধান একটি দেশে ধর্ম থেকে দুরদুর করার যে একটা প্রবণতা দীর্ঘদিন থেকে আমরা দেখে আসছি, সেটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে জুলাই সনদেও আমরা দেখেছি। এটা খুবই আপত্তিকর একটি বিষয়। এর বাইরে আরও আপত্তি করবার মতো বেশকিছু জায়গা এখানে আছে। তারপরও এই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার দরকার ছিল এবং এ বিষয়টির একটা অফিশিয়াল রূপ হওয়ার দরকার ছিল, সেটি হয়েছে।’
সবশেষে ইসলামি এই স্কলার বলেন, ‘সনদটিতে যে ত্রুটি ও অপূর্ণতা আছে, সেগুলো কারেকশন করার সুযোগ ছিল। কারণ এগুলো অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছিল। কিন্তু কোনোভাবেই তারা কানে নেয়নি। এজন্য আসলে জুলাইয়ের যে স্পিরিট আছে, সেই স্পিরিট দিন দিন দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্থিমিত হতে যাচ্ছে। আমি আশা করব, সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা এখান থেকে কিছুটা হলেও বার্তা গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন।’
সূত্র: কালবেলা