
ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন–দৌলতখান) আসনের বিএনপির এমপি প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিম সম্প্রতি এক সমাবেশে বলেছেন— “আমার নেতাকর্মীরা বাড়ির আশপাশে জামায়াতের লোকজন থাকলে নজর রাখবে। বহিরাগত কোনো জামায়াতের লোক পেলে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেবে।”
বক্তব্য দিতে গিয়েই তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে উদাহরণ টেনে বলেন— “মনে আছে তোমাদের ২০০১ সাল? এটা মনে করবেন আমার নির্দেশ।” ১৩ নভেম্বর বোরহানউদ্দিন পৌরসভার হাইস্কুল মাঠে বিএনপি প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিমের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই প্রার্থীর এমন উসকানিমূলক বক্তব্য ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। খায়ের উদ্দিন শরিফ নামে একজন লিখেছেন— “একজন আদর্শ রাজনীতিবিদের এমন বক্তব্য হতে পারে না। এটি ফ্যাসিবাদের ভাষা। এখন ২০০১ সাল নয়, ২০২৪—গণঅভ্যুথান-পরবর্তী সময়।”
আরেকজন লিখেছেন— “সহনশীল রাজনৈতিক মনোভাব থাকা উচিত।” মাসুম ভুইয়া নামে একজন বলেন— “যাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করেছে, এখন ভোটের মাঠে প্রতিপক্ষ হওয়ায় এমন বক্তব্য সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেবে না।”
বোরহানউদ্দিন বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন— “জামায়াতের এক এলাকার লোক অন্য এলাকায় গেলে তাদের ওপর হামলা করে পুলিশে তুলে দেওয়া—এটা কোনো রাজনীতিবিদের বক্তব্য হতে পারে না। সাধারণ মানুষের এতে উপকার নেই।”
সেদিনের সমাবেশে হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন— “আমাদের প্রতিপক্ষ একটা দল আছে (জামায়াত) যারা অতীতে আমাদের সঙ্গে নির্বাচন করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার আস্তিনে লুকিয়ে ছিল। তারা ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করে ১৮টা সিট পেয়েছে, দু’টি মন্ত্রণালয় পেয়েছে।
এই জামায়াত ২০০৮ সালে মইনউদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের সঙ্গে আঁতাত করে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে আমার ও আমার ভাইয়ের নামে মামলা দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন— “জামায়াত ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগে যুক্ত হয়ে নিরাপদে ছিল। এখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জয় পাচ্ছে। মনে করছে জাতীয় নির্বাচনেও জয়লাভ করবে।
‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং প্রশাসন থেকে জানতে পেরেছি—তারা প্রতিটি কেন্দ্রে পঞ্চাশজন, প্রয়োজনে পাঁচশ বা দুইশ লোক জড়ো করে ভোটারদের ভয় দেখাবে, যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে না আসে; এবং তারা সেই লোকদের দিয়ে ভোট নেবে।”
এদিকে বিএনপির গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ‘জামায়াতে ইসলামী’র কয়েকজন নেতা-কর্মী বিএনপিতে যোগ দিয়েছে—এমন ঘোষণা দেওয়া হয় এবং কয়েকজনের নামও প্রকাশ করা হয়।
পরবর্তীতে জামায়াত প্রেস ব্রিফিং করে জানায়—ঘোষিত ব্যক্তিদের কেউই জামায়াতের নেতা-কর্মী নন; বরং কখনো সংগঠনের সদস্যও ছিলেন না। অনেককে তারা প্রথমবার দেখেছেন বলেও দাবি করে সংগঠনটি।
ঘোষিত সেই কয়েকজনকে মিডিয়ায় জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান—তারা কখনো জামায়াতে ছিলেন না; স্থানীয় বিএনপির এক সাবেক পরিষদ সদস্য তাদের সমাবেশে নিয়ে গেছেন।
জামায়াতের উপজেলা আমির মাওলানা মাকসুদুর রহমান বলেন— “আমাদের সংগঠনে কেউ একদিনে এসে যোগ দিতে পারে না। দাড়ি-টুপি পরিয়ে কয়েকজনকে স্টেজে তুলে জামায়াত পরিচয় দেওয়া হয়েছে।”
ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন–দৌলতখান) আসনের বিএনপির প্রার্থী আলহাজ্ব হাফিজ ইব্রাহিম ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুর্নীতির মামলার কারণে অংশ নিতে পারেননি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা মো. ফজলুল, বলেন- ৫ আগস্টের পর এখন আর মানুষ ফ্যাসিবাদী রাজনীতি চায়না। তরুণ প্রজন্মের কাছে হুকমির রাজনীতি দিলে তা প্রত্যাখ্যান করবে। শেখ হাসিনাও এমন হুমকির রাজনীতি করবো জাতি সম্মিলিতভাবে প্রত্যাখান করবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জনপ্রিয়াতে দেখে তিনি হতাশা থেকে এমন কথা বলছেন। তার উচিত এমন ফ্যাসিবাদি বক্তব্য না দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া।









































