
পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন চাঞ্চল্যকর দাবি তুলেছেন তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক (ডিজি) প্রয়াত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভুইয়া। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞে ভারতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে তিনি প্রকাশ করেছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
রাকিলের দাবি, ২০০১ সালের বড়াইবাড়ি সীমান্তযুদ্ধ ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নেপথ্যসূত্র। ওই যুদ্ধে রংপুর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন তার বাবা মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ী হয়ে ফেরার পর থেকেই তিনি ভারতের টার্গেটে পরিণত হন বলে অভিযোগ তোলেন রাকিল।
বড়াইবাড়ি যুদ্ধ: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পটভূমি
২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোরে কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ি সীমান্তে হিন্দিভাষী সশস্ত্র সদস্যদের দেখে গ্রামবাসীরা বুঝতে পারেন তারা ভারতীয় বিএসএফ। মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
মাত্র আটজন বিডিআর জওয়ান সেদিন ভোর ৫টা থেকে টানা চার ঘণ্টা দুঃসাহসিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বিএসএফের বিরুদ্ধে। পরে আশপাশের ক্যাম্প থেকে আরও ২০ জন সদস্য যোগ দেন। দুপুরের দিকে ঢাকা সদর দপ্তরের নির্দেশে জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকেও শক্তিবৃদ্ধি পৌঁছালে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়।
১৮ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলা এই লড়াই শেষে বড়াইবাড়ির ভেতরে ১৬ জন বিএসএফ সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া যায়। শহীদ হন দুই বিডিআর জওয়ান।
এই যুদ্ধ আজও বড়াইবাড়ি যুদ্ধ নামে পরিচিত। সেখানে নির্মিত হয়েছে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ।
বড়াইবাড়ির ঘটনায় ভারতের ভেতরে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। নিহত বিএসএফ সদস্যদের একটি মরদেহ বাঁশে বেঁধে বহন করার ছবি প্রকাশিত হলে তা দুই দেশের সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ইন্ডিয়া টুডে ২০০১ সালের ৭ মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে লিখেছিল—এই ছবি এনিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ক্ষত-বিক্ষত থাকবে।
“এই ক্ষোভ থেকেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড”—রাকিলের দাবি
রাকিন আহমেদ ভুইয়া দাবি করেন, বড়াইবাড়ি যুদ্ধে পরাজয়ের ক্ষোভ থেকেই ভারত পরবর্তীতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত হয়। তার ভাষ্য:
> “বড়াইবাড়ি ও রৌমারীর যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর থেকেই আমার বাবা ভারতের টার্গেটে পরিণত হন। তিনি যখন বিডিআরের ডিজি হন, তখন থেকেই ভারত পরিকল্পনা শুরু করে। ২০০৭ সাল থেকেই তারা এ হত্যাযজ্ঞের প্রস্তুতি নেয়।”
রাকিন আরও অভিযোগ করেন, ভারত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় তৈরি করে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জমা
এদিকে ৩০ নভেম্বর জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
* পিলখানা হত্যাকাণ্ড কোনো আকস্মিক বিদ্রোহ ছিল না
* এটি ছিল পরিকল্পিত, সংগঠিত হত্যাযজ্ঞ
* ঘটনার পেছনে ছিলেন একজন প্রধান সমন্বয়কারী, তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস
* এমনকি এতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগনাল’ থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে
সূত্র : জনকণ্ঠ










































