প্রচ্ছদ জাতীয় চাকসু নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদে এগিয়ে শিবির

চাকসু নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদে এগিয়ে শিবির

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’ এক জরিপ প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি, সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এগিয়ে আছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা।

মঙ্গলবার রাতে সংস্থাটির ফেসবুক পেজে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে চাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলটি উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি করা হয়।

সোচ্চারের এই জরিপটি ৮ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়। এতে ৮০৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৪১ শতাংশ নারী, ১৩ শতাংশ অমুসলিম, এবং ৪ শতাংশ অবাঙ্গালী ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী। জরিপে ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক, ২৯ শতাংশ অনাবাসিক যারা ক্যাম্পাসের আশেপাশে বসবাস করে এবং ২৫ শতাংশ অনাবাসিক শিক্ষার্থী যারা শাটলের দূরত্বে শহরে বসবাস করে।

সোচ্চারের জরিপ অনুযায়ী, ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট প্রদান করবেন। ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন চাকসু নির্বাচনে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের প্রভাব পড়বে। জরিপে ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখেছেন এবং ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচিত চাকসু প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করতে পারবেন।

জরিপে ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন-প্যানেল দেখে নয়, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন আর ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন নেতৃত্বের জন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া জরুরি। ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থীদের পছন্দ রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র অ্যাক্টিভিস্টদের যৌথ প্যানেল। আর ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিবেন এমন প্রার্থীদের যারা একই সাথে ভালো ছাত্র ও ভালো অ্যাক্টিভিস্ট।

জরিপে ৭৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন-প্রার্থীর এলাকা, দল, আদর্শ বা ভোটারের সাথে পূর্ব পরিচয় মুখ্য না, তারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন। আর ৮২ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর কাছে প্রার্থীর জেন্ডার বিবেচ্য না। ১৫ শতাংশ প্রাধান্য দিবেন পুরুষ প্রার্থীকে এবং ৩ শতাংশ নারী প্রার্থীকে।

চাকসু প্রতিনিধিদের কাছে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চাওয়া হচ্ছে আবাসন ও ট্রান্সপোর্ট সমস্যার সমাধান, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সততা স্বচ্ছতা ও স্টুডেন্ট ফোকাস চাকসু, খাবারের মান বৃদ্ধি, ও প্রশাসনিক সংস্কার, সেশনজট কমানো, শিক্ষক মূল্যায়ন, লাইব্রেরি সংস্কার, রেজিস্ট্রার ভবনের সার্ভিস ডিজিটাল করা ইত্যাদি।

জরিপ অনুযায়ী যে বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে একজন প্রার্থীকে ভোট দিবেন শিক্ষার্থীরা। সেগুলো হলো–ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, সততা, ভালো সংগঠক, গুড সেন্স অব হিউমার, ভালো বক্তা, জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে, ভালো শিক্ষার্থী, প্রগতিশীল, ধার্মিক।

আর যে বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে একজন প্রার্থীকে ভোট দিবে না। সেগুলো হলো–ব্যক্তিত্বহীন, মাদকাসক্ত, যৌন কেলেঙ্কারি আছে, ধর্মবিদ্বেষী, চাঁদাবাজি বা দুর্নীতিমূলক কাজে জড়িত, সন্ত্রাসী, মিথ্যাবাদী, ছাত্র নির্যাতন করেছে বা করতে পারে এমন প্রার্থী।

জরিপে ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের ইব্রাহিম রনি পাবেন ২৩ দশমিক ১ শতাংশ ভোট, ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। মতামত নেই ৫৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাকি অন্যান্য। পুরুষদের মধ্যে আনডিসাইডেড ভোটার ৫১ শতাংশ আর নারীদের মধ্যে আনডিসাইডেড ৭২ শতাংশ।

জিএস পদে ছাত্রশিবিরের সাঈদ বিন হাবিব পাবেন ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ছাত্রদলের শাফায়েত হোসেন ৬ শতাংশ, স্বতন্ত্র প্যানেলের রশিদ দিনার পাবেন ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, মতামত নেই ৫১ শতাংশ। বাকি অন্যান্য। পুরুষদের মধ্যে আনডিসাইডেড ভোটার ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ আর নারীদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

এজিএস পদে ছাত্রশিবিরের সাজ্জাদ হোসেন মুন্না পাবে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ, ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক পাবে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ, স্বতন্ত্র শাখাওয়াত হোসেন শিপন পাবে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। অন্যান্য ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। মতামত নেই ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে আনডিসাইডেড ভোটার ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ আর নারীদের মধ্যে ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

আনডিসাইডেড ভোট প্রেডিকশান

আনডিসাইডেড ভোটাররা আল্টিমেইটলি কাকে ভোট দিবেন সেটা বুঝার জন্য সোচ্চারের গবেষকদল একটা পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। তার ভিত্তিতে সোচ্চারের প্রেডিকশান হচ্ছে–আনডিসাইডেড ভোটারদের মধ্য থেকে ছাত্রদল পাবে ২৭ শতাংশ, ছাত্রশিবির পাবে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য প্যানেল পাবে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

আনডিসাইডেড ভোটারদের ভোটসহ টোটাল কাস্টেড ভোটের মধ্যে ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী পাবে ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ, ছাত্রদলের প্রার্থী ভোট পাবে- ২২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বাকি ভোট অন্যান্য প্রার্থীরা পাবে।

আনডিসাইডেড ভোটারদের ভোটসহ টোটাল কাস্টেড ভোটের মধ্যে জিএস পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী পাবে ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ, ছাত্রদলের প্রার্থী ভোট পাবে- ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। বাকি ভোট অন্যান্য প্রার্থীরা পাবে।

আনডিসাইডেড ভোটারদের ভোটসহ টোটাল কাস্টেড ভোটের মধ্যে এজিএস পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী পাবে ৪০ দশমিক ৮০ শতাংশ, ছাত্রদলের প্রার্থী ভোট পাবে- ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। বাকি ভোট অন্যান্য প্রার্থীরা পাবে।

সুত্রঃ আমার দেশ