দেশজুড়ে : দরিদ্র এক পরিবার সমাজচ্যুত হওয়ার পর আবারও চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ৪ পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে এলাকাবাসী। চার পরিবার হলো – জোড়খালি গ্রামের ব্যাপারী বাড়ির সাইফুদ্দিন, সরকার বাড়ির গোলাম নবী সরকার, জোবায়ের ও মানিক সরকারের পরিবার।
এ চার পরিবারে সব মিলিয়ে ৩৯ জন সদস্য রয়েছেন। যেখানে বৃদ্ধ ও শিশুও রয়েছে। সচেতন নাগরিক সমাজের ভাষ্য, সমাজচ্যুত করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটা দ্রুত নিবারণ করা দরকার।
জানা গেছে, স্থানীয় মসজিদের ইমামকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২২ জুন ফেসবুকে একটি মতামত পোস্ট করেন মতলব পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড জোড়খালী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন। ওই পোস্টে কমেন্টস করেন একই এলাকার আরও তিন পরিবারের কয়েকজন সদস্য। ফেসবুকে মতামত পোস্ট করায় গেল ২৯ জুন রাতে মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেন তারা।
তবে এ চার পরিবারের সদস্যরা মসজিদ কমিটির কাছে ক্ষমা চাইলে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে বলেও জানানো হয়। এমন সিদ্ধান্তের পরপরই শিপন আহম্মেদ নামের স্থানীয় বাসিন্দার ফেসবুক আইডি থেকে সাইফুদ্দিনের ছবি পোস্ট করে তাকে ‘সমাজ থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে’ বলে প্রচার করা হয়। তারপর থেকে সমাজের লোকজন এই চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা ও চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করে মানহানির বিচার চান পরিবারগুলো। সাইফুদ্দিন বলেন, পৌর কাউন্সিলর সবুজ বেপারী গেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তার যোগসাজশে আমাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মসজিদ কমিটি। আমি তো ফেসবুকে কারো নাম নিয়ে পোস্ট করিনি। পোস্টে ছিল- ‘মসজিদের ইমাম পাল্টানো যায়, ঘুসখোর আর সুদখোর পাল্টানো যায় না। ’
সাইফুদ্দিনের পোস্টে মসজিদ কমিটির সম্মানহানি হয়েছে বলে এই সিদ্ধান্ত – এমন দাবি মসজিদ কমিটির সদস্য রুহুল আমিন মিয়াজীর। তিনি বলেন, ওই বৈঠকে গ্রামের ৮০ থেকে ১০০ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিল। তখন ৪ পরিবারকে সমাজ থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সবুজ ব্যাপারী ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুই পরিবার ক্ষমা চেয়েছে। বাকি চার পরিবার ক্ষমা চাইলে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে গ্রামবাসী।
চাঁদপুর সুজনের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, একজনকে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সমাজ কাউকে বা সরকার কাউকে দেয়নি। এটাকে যত দ্রুত নিবারণ করা যায়, ততই মঙ্গল। সমাজচ্যুতের এই বিষয়টাকে প্রশাসনের শক্তভাবে মোকাবিলা করা উচিত।
মতলব উত্তর উপজেলায় এক দম্পতিকে সমাজচ্যুত করার ঘটনার রেশ না কাটতেই এমন আরও একটি ঘটনা জনমনে উদ্বিগ্ন সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকেরা।
তবে এই বিষয়ে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ইমামকে বিদায় দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। পরবর্তী ঘটনা জানা নাই। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |