প্রচ্ছদ জাতীয় কোন সীমান্ত দিয়ে কিভাবে পালাল হাদিকে হামলাকারী, জানা গেল সকল তথ্য

কোন সীমান্ত দিয়ে কিভাবে পালাল হাদিকে হামলাকারী, জানা গেল সকল তথ্য

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত প্রধান দুই সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এবং আলমগীর হোসেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অর্ধকোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা, সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং পাসপোর্ট ব্লক করার খবরের মধ্যেই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ এই দুই আততায়ী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র পালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করা হয়নি।

তদন্ত সূত্র জানায়, গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ময়মনসিংহের সীমান্তঘেঁষা উপজেলা হালুয়াঘাটের একটি দুর্গম সীমান্ত পথ ব্যবহার করে তারা ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তাদের সীমান্ত পারাপারে সহায়তাকারী মানব পাচার চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

তদন্তে জানা গেছে, হামলার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রযুক্তির সহায়তায় ফয়সাল ও আলমগীরের গতিবিধি অনুসরণ শুরু করে। তবে সন্দেহভাজনরা কৌশলে নিজেদের ডিজিটাল ডিভাইস সচল রাখলেও সেগুলো নিজেরা বহন করেনি। অন্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে ডিভাইসগুলো চালু রেখে বারবার অবস্থান পরিবর্তন করানো হচ্ছিল। এতে পুলিশ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালালেও প্রকৃতপক্ষে তারা রাজধানী ছেড়ে নিরাপদে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গুলি করার পর তারা পল্টনের কালভার্ট রোড থেকে মোটরসাইকেলে নয়াপল্টন, শাহবাগ, বাংলামটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও আগারগাঁও হয়ে মিরপুরে পৌঁছায়। সেখান থেকে প্রাইভেটকারে করে আশুলিয়া ও গাজীপুর হয়ে সড়কপথে ময়মনসিংহ যায়। ময়মনসিংহের ব্রিজের পাড় এলাকায় যানবাহন পরিবর্তন করে আরেকটি প্রাইভেটকারে হালুয়াঘাটের দিকে রওনা দেয়। ওই গাড়িটি হালুয়াঘাটের ধারাবাজার এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে থামে। পরে তিন যুবক এসে তাদের মোটরসাইকেলে করে ভুটিয়াপাড়া এলাকায় নিয়ে যায়। রাত আড়াইটার দিকে তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার তুরা পৌরসভা এলাকায় পৌঁছায়। রোববার পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করছিল বলে তদন্ত সূত্রের দাবি।

রোববার হাদিকে হত্যাচেষ্টার বিষয়ে তথ্য জানাতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভিযুক্তদের কেউ বৈধভাবে বিদেশে পালিয়েছে—এমন কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত ইমিগ্রেশন ডাটাবেজে পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, ফয়সাল করিম মাসুদের সর্বশেষ বিদেশ যাত্রার রেকর্ড অনুযায়ী, তিনি গত জুলাই মাসে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছিলেন। এরপর তার দেশত্যাগের কোনো বৈধ রেকর্ড নেই।

তবে নজরুল ইসলাম জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করাতে জড়িত একটি চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির মালিক আব্দুল হান্নানকে র‌্যাব-২ গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

পুলিশ জানায়, সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তি হলেন সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসিম। শনিবার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ফুলপুর, ধোবাউড়া এবং হালুয়াঘাটসংলগ্ন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় ডিএমপির রমনা বিভাগের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। অভিযানে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, আটক ব্যক্তিরাই ফয়সাল ও আলমগীরকে সীমান্ত পার করিয়ে দিয়েছেন। তাদের সহায়তায় পলাতকদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় জড়িত সকলকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সূত্র : কালবেলা