
খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন (৪৪) আত্মহত্যা করেছেন। দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে মারধরের শিকার হয়ে দুঃখ ও ক্ষোভে বিষপান করে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার বেলা ৩টার দিকে খুলনা মহানগরীর গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। বিএনপির দুঃসময়ের এ পরীক্ষিত নেতার মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার পাইকগাছা পৌরসভা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা: আব্দুল মজিদ গ্রুপের অনুসারী হিসেবে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন মিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন সেলিম রেজা লাকি। অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বহিস্কৃত এনামুল হকের অনুসারী সভাপতি প্রার্থী ছিলেন আসলাম পারভেজ এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজ। নিহত মোশারফ মজিদ গ্রুপের কর্মী হিসেবে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এ বিষয়ে সেলিম রেজা লাকি বলেন, মোশারফ ছিলেন পাইকগাছা বিএনপির দুঃসময়ের একজন পরীক্ষিত কর্মী। আওয়ামী আমলে অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপির সাথে ছিলেন। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক। আমরা ডাক্তার সাহেবের অনুসারী হিসেবে সম্মেলনে প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু সম্মেলনের দিন বেলা ৩টার দিকে পৌর বিএনপির নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদের ভাই রাজীব নেওয়াজ মোশারফকে গালিগালাজ ও মারধর করে। আগেও তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়।
মৃত মোশারফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন সুমন বলেন, মোশারফ দলকে ভালোবাসতেন। প্রচণ্ড আবেগি ছিলেন। তাকে শারীরিকভাবে মারধর করায় অপমানিত হন। রাতেও অনেক সময় কথা হয়। তখন তাকে বেশ বিষন্ন মনে হয়। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তার মেয়ে ফোন করে জানায় আব্বু বিষ খেয়েছে। তাকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে আইসিইউ না পাওয়ায় গাজী মেডিক্যালে আনা হয়েছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মোশারফ আত্মহত্যা করেনি । তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সেলিম নেওয়াজের সাথে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বলেন, আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন? নেতাদের ফোন দেন। আসলাম পারভেজকে ফোন দেন। আপনার ভাই নিহত মোশারফকে মারধর করেছিল কেন, জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এদিকে বিএনপি নেতার মৃত্যুর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তীব্র বাধা ও প্রতিকূলতার শিকার হন সাংবাদিকরা। অনেককে হাসপাতালে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। নিহতের পরিবারের আহাজারির ছবি তোলায় এক সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে গ্যালারির সব ছবি মুছে ফেলা হয়। খুলনা জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটলেও তারা ছিলেন নীরব ভূমিকায়।
জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, পারিবারিক বিষয়ে মনোকষ্টে তিনি বিষ পান করেছিলেন। এ সময় তার ওপর হামলা ও অপমান করার প্রসঙ্গ বলা হলে তড়িঘড়ি করে বলেন, আসলে আমি এইমাত্র খবর পেয়ে এসেছি। সব না জেনে বলতে পারছি না। সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার ও মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করা প্রসঙ্গে বলেন, এটা নিউজ হওয়ার মতো বিষয় না। এজন্য হয়তো কেউ নিষেধ করেছে।
সূত্র: আরটিভি













































