প্রচ্ছদ সারাবিশ্ব ইরান-ইসরাইল দ্বন্দ্ব, সমস্যায় ভারত

ইরান-ইসরাইল দ্বন্দ্ব, সমস্যায় ভারত

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে নয়াদিল্লিতে। এই ‘যুদ্ধে’র প্রভাব সরাসরি ভারতীয় অর্থনীতির উপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার বাতাসে ফের বারুদের গন্ধ। ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে ইরান-ইসরাইল ‘যুদ্ধ’। ইতোমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়েছে। লড়াইয়ের আঁচ ভারতও টের পাচ্ছে। বিশ্লেষকদের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ চললে খনিজ তেলের দাম আকাশ ছোঁবে। পাশাপাশি বন্ধ হতে পারে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্র বাণিজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা।

চলতি বছরের ১৩ জুন ইরানের একাধিক পরমাণুকেন্দ্র এবং সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ‘ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স’ বা আইডিএফের বিমানবাহিনী। ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন সেনা কমান্ডার এবং পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী। এর পরই পাল্টা প্রত্যাঘাত হানে সাবেক পারস্য দেশ। ফলে দু’পক্ষে তুমুল ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়। বিশ্লেষকদের দাবি, প্রাথমিকভাবে এই লড়াইয়ের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে অপরিশোধিত তেলের দামে।

অয়েল প্রাইস ডট কমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৩ তারিখ ভোরে ইরানে ইসরাইলি হামলার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ব বাজারে ‘তরল সোনা’র দাম ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এক দিনের মধ্যে প্রায় পাঁচ ডলার বেড়ে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বর্তমানে প্রতি ব্যারেলে ৭৪ থেকে ৭৫ ডলারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ওপেক বাক্সেটে এর দাম ৭০ থেকে ৭২ ডলার। ‘যুদ্ধে’র ভয়াবহতা তীব্র হলে ব্যারেল প্রতি অশোধিত তেলের দাম ৯০ থেকে ৯৫ ডলার ছাড়াতে পারে বলেও ইতোমধ্যেই ইঙ্গিত মিলেছে।

পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর দাবি, দিনে ৩৩ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করে ইরান। যা বিশ্বব্যাপী ‘তরল সোনা’ উৎপাদনের প্রায় তিন শতাংশ। এর মধ্যে দৈনিক ১৫ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে থাকে তেহরান। ইরানের খনিজ সম্পদের মূল ক্রেতা চিন এবং তুরস্ক। সাবেক পারস্য দেশ থেকে ৮০ শতাংশ অশোধিত তেল আমদানি করে বেইজিং। ‘যুদ্ধে’র কারণে হঠাৎ করে ইরান খনিজ তেলের সরবরাহ বন্ধ করলে বিশ্ব জ্বালানি সঙ্কটের মুখে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পারস্য উপসাগরের কোলের দেশ ইরানের গা ঘেঁষে রয়েছে হরমুজ প্রণালী, যা সমুদ্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হিসেবে স্বীকৃত। এখান থেকে দিনে দু’কোটি ডলারের বেশি মূল্যের তেল সরবরাহ করে পশ্চিম এশিয়ার একাধিক আরব বিশ্ব, যার মধ্যে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম। অতীতে এই ধরনের পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকবার হরমুজ প্রণালীকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির কৌশল নিতে দেখা গিয়েছে তেহরানকে।

ইরান-ইসরাইল সংঘাতের জেরে ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। কারণ, ইসরাইলি হামলার ভয়ে দেশের আকাশসীমা (এয়ারস্পেস) বন্ধ করেছে তেহরান। ইরানের পাশাপাশি একই পথে হেঁটেছে প্রতিবেশী দেশ ইরাক এবং জর্ডান। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরও। এর ফলে বিপাকে পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়াসহ আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ সংস্থা।

ইরানের সীমান্তবর্তী পূর্ব ইরাক বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত আকাশপথ। এই পথ ধরে পশ্চিমের কোনো রাষ্ট্র কিংবা ইউরোপে যায় এশিয়ার সকল দেশের বিমান। বিকল্প পথে যাতায়াতের ফলে বিমানগুলোর বাড়ছে জ্বালানির খরচও।

এত দিন পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার ইউরোপগামী বিমানগুলো পশ্চিম এশিয়ার ওই আকাশপথ ধরেই যাতায়াত করত। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিকল্প পথ ধরে আকাশাযানগুলোকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এই নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে টাটা গোষ্ঠী। সেখানে বলা হয়েছে, হঠাৎ করে আকাশপথ বন্ধ হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। বেশ কিছু বিমানকে মাঝপথ থেকে ফিরিয়েও আনতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ১৬টি বিমানের যাত্রাপথ এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ বদল করেছে।

বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বিকল্প পথ হিসেবে এশিয়া থেকে ইউরোপের দিকে যাওয়া বিমানগুলো মিশর এবং সৌদি আরব হয়ে যাতায়াত করতে পারে। অথবা পশ্চিম এশিয়ার আকাশসীমা এড়িয়ে তুরস্ক, আজারবাইজান এবং তুর্কমেনিস্তান হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছোনোর সুযোগ রয়েছে তাদের। তবে দু’টি ক্ষেত্রেই চলাচলের ক্ষেত্রে সময় ও জ্বালানি খরচ দুটোই বাড়বে। ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার বেড়েছে আর্থিক লোকসানের চাপ।

রোববার সম্ভাব্য পরমাণু চুক্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু, ইসরাইলি হামলার পর সেই সম্ভাবনা ভন্ডুল হয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাইকে উদ্ধৃত করে ইরানের সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, আমেরিকা একপাক্ষিক আচরণ করছে, তাই আলোচনা অর্থহীন।

সূত্র: আনন্দবাজার