প্রচ্ছদ জাতীয় আমি ভাগে পেয়েছি মাত্র ৮ হাজার, বাকি টাকা নিয়েছে ওসি-সোর্সরা

আমি ভাগে পেয়েছি মাত্র ৮ হাজার, বাকি টাকা নিয়েছে ওসি-সোর্সরা

টাঙ্গাইলের যমুনা সেতু পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল মিয়ার বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুসারে, এক সিএনজি চালকের পরিবারকে দুই দফায় ৬৫ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়। পরে সেই টাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সোর্সদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার গুরুতর অভিযোগও এসেছে।

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, কোনো মামলা বা অভিযোগ ছাড়াই এসআই রাসেল তাঁদের বাড়িতে প্রবেশ করে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন। পরে প্রকাশিত অডিও ক্লিপে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে স্বীকার করতে শোনা যায়। ঘটনাটি ঘটেছিল গত ৯ সেপ্টেম্বর, তবে সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই রাসেল মিয়াকে শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে পুলিশ লাইনে হাজির (ক্লোজড) করা হয়েছে। এর আগে গত ২৬ আগস্ট জেলার গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামকে থাপ্পড় মারার ঘটনায় এসআই রাসেলকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরে তাঁকে যমুনা সেতু পূর্ব থানায় পদায়ন করা হয়। সেখানে গিয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর কালিহাতীর দেউপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের হাফেজ জোনায়েদ আল হাবিব যমুনা সেতু মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হন। নিহতের পরিবার কোনো অভিযোগ না করলেও ১২ সেপ্টেম্বর এসআই রাসেল দুই পুলিশ সদস্যসহ মীরহামজানি গ্রামের সিএনজি চালক সেলিমের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২৫ হাজার টাকা আদায় করেন এবং সিএনজিটি থানায় নিয়ে যান। পরে আরও ৪৫ হাজার টাকা দাবি করলে সেলিমের পরিবার ঋণ করে টাকা জোগাড় করে দেন। এরপর সিএনজি ফেরত দেওয়া হয়।

নিহত জোনায়েদের ভাই বলেন, ‘জানাযায় ট্রাকটির মালিকপক্ষ উপস্থিত থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলেও আমরা তা নেইনি এবং থানায় কোনো অভিযোগ করিনি। এরপরও পুলিশ ট্রাকের মালিকের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে চাপ দিচ্ছে বলে আমরা শুনেছি। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনায় সিএনজি চালকের কোনো দায় না থাকলেও তার কাছ থেকে পুলিশ দুই দফায় ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে!’

স্থানীয় তানভীর আহমেদ বলেন, ‘রাসেলসহ তিনজন পুলিশ সেলিমের বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের ভয় দেখায় ও গালিগালাজ করে। তারা অভিযোগ পেয়েছে বলে দাবি করে, অথচ কোনো অনুমতি ছাড়াই গ্রামে প্রবেশ করে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান ফরিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘রাতে এসআই রাসেল আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। এসময় তিনি চালককে বের করে দেওয়ার জন্য নারী সদস্যদেরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে নিরুপায় হয়েই আমরা পুলিশের সাথে ৭০ হাজার টাকায় চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছি।’

সেলিমের বাবা আব্দুল হাই বলেন, ‘পুলিশ প্রথমে দুই লাখ টাকা দাবি করে। পরে দফারফা হয় ৭০ হাজারে। আমরা ভয় পেয়ে প্রথমে ২৫ হাজার, পরে ৪৫ হাজার দিই। থানায় গিয়ে তারা ৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়। তারপর সিএনজি নিয়ে আসি।’

সিএনজি চালক সেলিম বলেন, ‘আমার কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ভয় দেখিয়ে দুই দফায় ৬৫ হাজার টাকা নেয়। এখনো ভয় পাচ্ছি, আবার না কোনো মামলায় জড়িয়ে দেয়।’

যমুনা সেতু পূর্ব থানায় কর্মরত অভিযুক্ত এসআই রাসেল মিয়া ঘুষের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘আমি তাদেরকে ম্যানেজ করার জন্য একটু সময় নেব। যদি না করতে পারি, সেটা আমার ব্যর্থতা। পরে যা হবার হবে।’

ঘুষের পুরো টাকা একা খেতে পারেননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ওসি নিয়েছেন ওসির ভাগ, ফোর্স ও সোর্স নিয়েছে তাদের ভাগ। এখন কারো কাছে আমি চাইতে পারব কি? কারো কাছে তো চাইতে পারব না। আমি ভাগে পেয়েছি সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা। তারপরও ৫টা কাজ করতে গেলে একটা কাজ ফাটবে। এটা কোনো ঘটনা না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে যমুনা সেতু পূর্ব থানার তৎকালীন ওসি ও বর্তমানে শরীয়তপুরের সখিপুর থানার ওসি ফয়েজ আহমেদ সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি যমুনা সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলাম। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানি না। ঘটনাটির তদারকি করেছেন এসআই রাসেল। তিনি অর্থ লেনদেনে সম্পৃক্ত ছিলেন কিনা, তা আমার জানা নেই। পরে বদলি হয়ে আমি সখিপুরে যোগ দিই।’

বিকেলে যমুনা সেতু পূর্ব থানার বর্তমান ওসি মো. সবজেল হোসেন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। ওই বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই। আমার জন্য বিব্রতকর।’ তিনি জানান, গতকাল রাতে অভিযুক্ত এসআইকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি, এবং বার্তা পাঠিয়ে বক্তব্য চাইলেও সাড়া দেননি।

পরে সন্ধ্যায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো. আদিবুল ইসলাম মুঠোফোনে সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নলেজে এসেছে। অধিকতর তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র: সময়ের কণ্ঠস্বর