সবচেয়ে সুন্দর ও মধুর শব্দ ‘মা’। পৃথিবীর সব মায়া, পরম মমতা, অকৃত্তিম স্নেহ, আদর, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা স্রেফ মায়ের কাছেই মেলে। যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রিয় শব্দ কী? নিশ্চয়ই সবার শর্তহীন উত্তর একটাই, মা। সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে একটি শিশু গাছে লিখেছিল, ‘মা, তুমি যেখানেই থাকো, সেখানেই আমাদের ঘর।
’ পরম মমতাময়ী সেই মা যদি রোগশয্যায় ছটফট করেন, বিনা চিকিৎসায় ধুঁকেন-সন্তানের আকুতি কী হতে পারে এরই যৎসামান্য চিত্র ফুটে উঠল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এক কিশোর শিক্ষার্থীর লেখা চিঠিতে। ভুল চিকিৎসায় মা ধুঁকছেন, মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য খোদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীকে অনুরোধ জানিয়ে আবেগঘন চিঠি দেন ওই কিশোর। এরই মধ্যে কিশোরের লেখা চিঠিটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর হাতেও পৌঁছেছে।
রবিবার (৩ মার্চ) কিশোর শিক্ষার্থীর লেখা চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে।
মায়ের জন্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে চিঠি লেখা ওই কিশোরের নাম জাহিদুল ইসলাম জুবায়ের। সে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার রতনপুর গ্রামের আসাদুজ্জামানের ছেলে। জুবায়েরের বয়স যখন তিন, তখন তার মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সে তার মায়ের সঙ্গে শ্রীপুর উপজেলার (দুই নম্বর সিএন্ডবি) চন্নাপাড়া গ্রামে ভাড়া বাসায় থেকে পাশের বেড়াইদেরচালায় আব্দুল মালেক মাস্টার কিন্ডার গার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুলে পড়ছে।
ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।
প্রতিবেশীরা জানায়, ওই কিশোরের মায়ের নাম জেসমিন আক্তার (৩৫)। মাওনায় ভিনটেজ ডেনিম লিমিটেড কারখানায় চাকরি করতেন। শয্যাশায়ী হওয়ার পর গত তিন মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
শয্যাগত জেসমিন আক্তার জানান, বছর খানেক আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরীক্ষায় জরায়ুতে টিউমার ধরা পড়ে। পরে সহকর্মীদের সহায়তায় মাওনা চৌরাস্তায় বেসরকারি একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, অস্ত্রোপচারকালে তার ভুল চিকিৎসা হয়। পরে রাজধানীর মগবাজারে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ফের অস্ত্রোপচার হলেও তা সফল হয়নি। চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন, ফের অস্ত্রোপচার করা না হলে তাকে হয়ত বাঁচানো সম্ভব হবে না।
জেসমিন আক্তার জানান, তার চাকরি নেই। বাসা ভাড়াও দিতে পারেন না। দুই বেলা দুমুঠো খেয়ে খুব কষ্টে তাদের দিন কাটছে। ফলে চিকিৎসার কথা চিন্তাও করতে পারছেন না।
কান্নায় ভেঙে পড়ে জেসমিন আক্তার জানান, জুবায়ের তার একমাত্র সন্তান। সে খুব মেধাবী শিক্ষার্থী। মাথার কাছে বসে সে শুধু কাঁদে।
জাহিদুল ইসলাম জুবায়ের জানায়, তার পৃথিবী বলতে মা। মা ছাড়া আর কেউ নেই। বাবা তার খোঁজ নেন না। মাকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনে তার জীবন দিতেও প্রস্তুত সে। কোনো উপায় না দেখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীকে চিঠি লিখে মায়ের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি জানায়।
জুবায়ের জানায়, চিঠিটি লিখে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিনকে দিয়ে সেটি প্রতিমন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করে সে।
গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জুবায়েরের অনুরোধে চিঠিটা আমি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দিয়েছি।’
প্রতিমন্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠির একটি অংশে জুবায়ের লিখেছে, ‘আমরা খুবই দরিদ্র মানুষ। আমার বয়স যখন তিন তখন আমার বাবা-মার ডিভোর্স হয়েছিল। তখন থেকেই আমার মা একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে হেলপার পদে চাকরি করতেন। তাতেই আমাদের সংসার চলে। এক বছর আগে আমার মায়ের জরায়ুতে টিউমার ধরা পড়ে। মাওনা চৌরাস্তার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের কয়েকদিন পরে সবাই বুঝতে পারে অপারেশনটি ভুল হয়েছিল। টিউমারর অপারেশন করতে গিয়ে তারা টিউমারের সঙ্গে মূত্রথলীও কেটে ফেলে। দ্বিতীয়বার অপারেশন করা হয়েছিল মগবাজারের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। অপারেশনটিও সফল হয়নি। আমার মার অবস্থা খুবই খারাপ। আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে অপারেশন করতে না পারলে আমার মাকে বাঁচানো যাবে না।’
চিঠির আরেক অংশে জুবায়ের লিখেছে, ‘আমি আমার মাকে এখনি হারাতে চাই না। প্লিজ আপনি আমার মায়ের জন্য এগিয়ে আসুন।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |