বাবা, বাবা বলে অনেক কান্না করেছি। আমার বাবাকে কেউ এনে দিতে পারে না। মা বললো, আমি কখনোই বাবার স্পর্শ পাই নাই। তিনি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যান নাই। আমি আমার বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। আমার বাবাকে মুক্তি দিন, আমি তার আদর পাইতে চাই। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা জজ আদালতের গ্রিল ধরে কান্না কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিল সাড়ে ৫ বছরের এক শিশু (নাম গোপন রাখা হলো)। শিশুটি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার ৮নং আসামি মোশারফের (৩৫) ছেলে। মোশারফ সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্য ব্যাগ্যা গ্রামের তোফায়েল আহমেদের ছেলে।
এসময় পাশে থাকা মোশারফের স্ত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলেকে তার বাবাকে দেখানোর জন্য আদালতে আনসি। তাকে দেখানোর পর সে বাবা বলে চিৎকার দিয়ে উঠেছে। তার চিৎকার শুনে আমার বুকটা ফেটে গেছে। যা কাউকে দেখাতে পারবো না। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় আজ পাঁচ বছর আমার স্বামী কারাগারে। এই বাচ্চাটাকে সে কখনো আদর করতে পারে নাই। সন্তান পেটে থাকতে তাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার স্বামীর মুক্তি চাই। আল্লাহর আদালতে ন্যায় বিচার চাই।মামলার ১০নং আসামি মো. রুহুল আমিনের স্ত্রী রিম্পা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী ইউপি সদস্য ছিলেন। আমার স্বামীর ফোন সাইলেন্ট ছিল। তিনি ফোন ধরতে পারেন নাই। তার সঙ্গে যে ইউপি সদস্য হতে পারে নাই তারা ষড়যন্ত্র করে এই মামলার আসামি করেছে। আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ছালেহ আহম্মদ সোহেল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আসামিপক্ষের পাঁচজন সাফাই সাক্ষী দিয়েছে। মামলায় রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ৮ জন আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন। তার মধ্যে মোশারফ ও রুহুল আমিনের নাম নেই। তবে জবানবন্দিতে ৮ আসামি ছাড়া বাকি আটজনকে সহকারী হিসেবে নাম এসেছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রছুল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুবর্ণচরে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সেই আলোচিত ঘটনায় রায় ঘোষণার কথা ছিল। সকালে আসামিদের হাজির করা হয়। বিচারক শুনানি শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি নতুন দিন ধার্য করেন। এ মামলায় কারাগারে রয়েছেন ১৫ জন আসামি। একজন পলাতক রয়েছেন। ভুক্তভোগী নারী ন্যায় বিচার পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।
প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার রায় মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে ঘোষণার কথা ছিল। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস নতুন দিন ৫ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন জেলা জজ ফাতেমা ফেরদৌস। মামলার আসামিরা হলেন, সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্য ব্যাগ্যা গ্রামের মো. সোহেল (৩৮), মো. হানিফ (৩০), স্বপন (৪২), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বাদশা আলম বসু (৪০), আবুল হোসেন আবু (৪০), মোশারফ (৩৫), মো. সালাউদ্দিন (৩২), মো. রুহুল আমিন (৪০), মো. জসিম উদ্দিন (৩২), মো. হাসান আলী বুলু (৪৫), মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮), মো. মুরাদ (২৮), মো. জামাল ওরফে হেঞ্জু মাঝি (২৮) ও মো. সোহেল (২৮)। এছাড়া আসামি মো. মিন্টু ওরফে হেলাল ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |