
সরকারের প্রভাবশালী কর্তা ব্যক্তিদের নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তার সরাসরি হস্তক্ষেপে ৭ মে দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা জুলাই-আগস্ট মামলার আসামি আবদুল হামিদের ভিআইপি নিরাপত্তায় দেশত্যাগের ঘটনায় সর্বত্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন উঠেছে এ ঘটনায় জড়িত সরকারের প্রভাবশালী কর্তা ব্যক্তিরা তাহলে কি আইনের উর্ধ্বে! ঘটনার পর মাঠ পর্যায়ের চার জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হলেও গত ২০ দিনেও প্রকৃত জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহনের ঘটনা ঘটেনি।
অথচ ১০ মে দিনাজপুরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আগমন ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন জুলাই আন্দোলনকারীরা। সেখানে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলে, সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদকে দেশ ছাড়তে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে আমিই চলে যাব। নির্দেশ দাতারা এখনও বহাল তবিয়তে থাকায় বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়টি নিয়ে গঠিত দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি এবং অতিরিক্ত আইজিপি (অ্যাডমিন) মতিউর রহমান শেখের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি। ইতিমধ্যে পুলিশের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। ওই তদন্ত রিপোর্টে জড়িত সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি, শীর্ষ গোয়েন্দা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে কারো না কারো সহযোগিতা-যোগসাজশ ছিল। পরিস্থিতি না বুঝেই বক্তব্য দেওয়া এবং পরে সমালোচনার মুখে অধস্তনদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি ‘রোগ না বুঝে চিকিৎসা’ দেওয়ার মতো। আব্দুল হামিদের বিদেশ যাত্রার বিষয়টি চাউর হওয়ার পর চাপে পড়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও পুলিশ প্রশাসন। চাপের মুখে দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে ওইদিন সন্ধ্যায় দুই কর্মকর্তাসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় পুলিশ সদরদপ্তর। এর মধ্যে দুজনকে প্রত্যাহার করা হয়, আর দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রত্যাহার করা সদস্যরা হলেন- ওই রাতে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বপালন করা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফ ও কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলাম ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) টিএসআই মো. সোলায়মানকে।
বিমানবন্দরে দায়িত্বে থাকা এসবির এক কর্মকতা বলেছেন, হামিদকে আটকানোর বিষয়ে পূর্ববর্তী কোনো নির্দেশনা ছিল না। এছাড়া ঘটনার রাতে চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী স্টেপ বাই স্টেপ সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি না আমাদের দোষ কোথায়। যাদের সরাসরি তদারকিতে এ ঘটনা ঘটেছে তারা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এখানে উদরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথম দফায় দেশের ২০তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন। এরপর তিনি ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বার ২১তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন। তার মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবন ছাড়ার পর আবদুল হামিদ রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসায় উঠেছিলেন। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি ওই বাসায় আর ছিলেন না। এতদিন কোথায় ছিলেন, তা এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানে হামলা ও গুলি করার ঘটনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়।
সূত্র: ইনকিলাব