রাজনৈতিক: ক’দিন ধরে ফেসবুকের টাইমলাইনে ভাসছে একটি কমিটির তালিকা। সেটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির। এর অনুমোদন দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই তালিকায় সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে নতুন এমপি হওয়া হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর নাম। তিনি উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলীর পীরের ছোট ছেলে। একইসঙ্গে সিলেট অঞ্চলের ফুলতলীর পীরের অনুসারীদের প্রিয় সংগঠন আল ইসলাহ’র কেন্দ্রীয় সভাপতিও। ফলে এই উপ-কমিটিতে মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী এমপি’র নাম থাকায় ফুলতলীর পীরের অনুসারী এবং রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক তুমুল সমালোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে রীতিমতো ট্রল হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আওয়ামী লীগেরই একজন বলে হুছামুদ্দীন চৌধুরীকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে এখন পর্যন্ত ওই পক্ষ হুছামুদ্দীনকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তার অনুসারীরা জানিয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন- আর আওয়ামী লীগের ধর্ম উপ-কমিটিতে হুছামুদ্দীন এমপি’র নাম দেখে তারা সিলেটে বিতর্ককে উসকে দিচ্ছে। এ কারণে হুছামুদ্দীন চৌধুরীও তার ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরেছেন। সিলেট-৫ আসনে এবার হঠাৎ করেই এমপি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন। তার দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়। এ কারণে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হন। নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর তাকে সংসদের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। সম্প্রতি সিলেট-৫ আসনের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি হাফিজ আহমদ মজমুদার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন- প্রথমবার এমপি হয়ে সংসদের স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি হওয়ার রেকর্ড অতীতে কারও ছিল না। এবার এই রেকর্ডের মালিক হলেন হুছামুদ্দীন চৌধুরী এমপি।
এদিকে- গত ১২ই মার্চ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির নাম। দলের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরে অনুমোদনপ্রাপ্ত এই উপ-কমিটিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৯ সদস্যের নাম ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে দু’নম্বরে রয়েছে হুছামুদ্দীন চৌধুরী এমপি’র নাম। এই কমিটির তালিকা সিলেট অঞ্চলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গত শনিবার নিজের ফেসবুক পেজে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। পাশাপাশি তিনি ওই কমিটির কাগজে দস্তখতকারী ব্যক্তির কাছে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তাকে না জানিয়ে উপ-কমিটিতে কেন তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হলো সে বিষয়ে জানতেও চেয়েছেন।
তিনি বলেন- ‘বিগত নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি বিশেষ আন্তরিকতা রাখেন বিধায় আমাকে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এটি একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সংসদ নেতা চাইলে সরকার দল-বিরোধী দল নির্বিশেষে যেকোনো সংসদ সদস্যকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন এবং সংসদ যথা নিয়মে তাকে নির্বাচন করতে পারে। এবার অনেক স্বতন্ত্র সদস্যকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে। কোনো মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি বা সদস্য হওয়ার মানে সরকার দলের সদস্য হওয়া নয়। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই; বরং সুপরিচিত ইসলামী সংগঠন বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আল ইসলাহ্থর সভাপতি।’
তিনি বলেন, ‘আমি গত ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। অথচ এই কমিটির মেয়াদ ২০২২-২০২৫। এখানে আমার নাম আসার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নাম এখানে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো।’ মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী কোনো বিষয়ে না জেনে বাড়াবাড়ি কিংবা ভুল প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে- আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘সংসদের স্থায়ী কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে তাদের দলের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার রীতি আছে। পদাধিকার বলেই তারা কমিটির সদস্য হয়ে যান। সে অনুযায়ী হয়তো হুছামুদ্দীন এমপি’র নাম চলে এসেছে।’ তিনি বলেন- ‘এতে যদি হুছামুদ্দীন এমপি’র আপত্তি থাকে তিনি এ ব্যাপারে লিখিত জানালে, আমরা কমিটি থেকে তার নাম বাদ দিয়ে দেবো। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার অবকাশ নেই বলে জানান তিনি।’
এদিকে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফুলতলী পরিবারে সদস্যরা বলছেন, এ ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না। মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরীর ভাতিজা ও আল ইসলাহ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী বলেছেন- ‘আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটিতে ছোট ছাহেবের (হুছামুদ্দীন) নাম এসেছে, এমন একটি ছবি একাধিক ব্যক্তি পাঠিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না। বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, ১২ই মার্চ-২৪ এটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দিনটি ছিল প্রথম রামাদান। পবিত্র রামাদান মাসে আমাদের সংগঠন ও সিলসিলার প্রধান দায়িত্ব থাকে দারুল কিরাতের শিক্ষাদান। দেশ-বিদেশের প্রায় পাঁচ লাখ ছাত্রছাত্রীর ভর্তির মনিটরিং করতে হচ্ছে। এদিকে ছাহেব বাড়িতে ছাদীস জামাতের তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আবাসিক রয়েছেন। যাদের থাকা-খাওয়া, ক্লাস ও তরিবয়তের সার্বক্ষণিক তদারকি করতে আমাদেরকে রাতদিন নির্ঘুম দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমন সময় কোনো অনুসন্ধান ও বিবৃতি দেয়া সম্ভবপর হচ্ছে না। যেহেতু অনলাইনে আমরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি এবং এটা ফুলতলী মসলকের অনুসারী ও দেশবাসীকে ভুল বার্তা দিবে তাই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া প্রয়োজন। বিষয়টি দেখার জন্য আল ইসলাহ নেতৃবৃন্দকে বলেছি। তবে সামগ্রিকভাবে আমরা খুবই বিব্রত বোধ করছি।’
সিলেট মহানগর আল ইসলাহ সাধারণ সম্পাদক আজির উদ্দিন পাশা জানান- ‘আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য পদ নিবেন, প্রশ্নই আসে না। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকলেও আল ইসলাহ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সুন্নীয়তের পতাকাবাহী কাফেলা সংগঠনের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক থাকতে পারে না। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। স্বাধীনতা ও পরবর্তী সময়ে দেশ পরিচালনায় এ দলের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু দলটির মূলনীতি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। এটা সুফিজমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমাদের পীর ও মুরশিদ আজীবন সেক্যুলারিজমের বিরোধিতা করে গেছেন। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর উত্তরাধিকারী মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দিবেন, এটা কখনওই হতে পারে না। জাতীয় স্বার্থে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া যেতে পারে কিন্তু নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |