প্রচ্ছদ জাতীয় অলির এলডিপিতে ভাঙনের সুর

অলির এলডিপিতে ভাঙনের সুর

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ও আসন সমঝোতা নিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) চলছে চরম গৃহদাহ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক এই দলটিতে এখন ভাঙনের সুর শোনা যাচ্ছে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের একটি বড় অংশ জামায়াত ইসলামীর নেতৃত্বাধীন নতুন জোটে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, আসন বণ্টন ইস্যুতে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম এবং মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের একচ্ছত্র আধিপত্যে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন সিনিয়র নেতাদের একাংশ।

তারা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘদিন ধরে দলীয় গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে একনায়কতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসছেন এই দুই নেতা। মনোনয়ন ঘোষণাকে ঘিরে সেই ক্ষোভ এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, অলি আহমদের জন্য চট্টগ্রাম-১৪ এবং রেদোয়ান আহমেদের জন্য কুমিল্লা-৭ আসন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিন্তু দলের অন্যান্য নেতাদের জন্য কোনো আসন নির্ধারণ না হওয়ায় প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ জেলা পর্যায়ের অনেকেই এখন বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম খুঁজছেন। জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে নতুন জোটে যাওয়ার বিষয়ে এই অংশের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলেও একটি সূত্র দাবি করেছে।

দলটির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অলি সাহেব এখন এককভাবে সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমরা কেউ জানি না বিএনপির সঙ্গে কত আসনে সমঝোতা হয়েছে। আমাদের মতামত না নিয়েই সব কিছু হচ্ছে। এতে আমাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই মনে করছেন, বিএনপি এবার শরিকদের তেমন গুরুত্ব দেবে না। সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামি দলগুলোর জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়াই কৌশলগতভাবে ভালো হবে।’

এদিকে, দলের ভেতরে বাড়তে থাকা অসন্তোষের বিষয়ে জানতে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। ১৫টি আসন চেয়েছি, তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি।’

দলের ভেতরে বিভাজন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘বিভাজন বলতে কিছু অতি উৎসাহী লোকজন আছেন, যারা বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর কিছু মন্তব্য করেছেন। আমরা তাদের সতর্ক করেছি। দুই-একদিনের মধ্যে বৈঠকে বসে সবকিছু ঠিক করে ফেলবো।’

সূত্র মতে, বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর শরিক দলগুলোর মধ্যে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, এলডিপি তারই একটি প্রতিফলন। বিশেষ করে জামায়াত ইসলামীর নতুন উদ্যোগে শরিক দলগুলোকে একত্র করার প্রচেষ্টা এখন এই ভাঙনের পেছনে প্রভাব ফেলছে।

আগামী সপ্তাহের মধ্যে এলডিপির ভেতরে এই অস্থিরতা আরও স্পষ্ট হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। দলের একাংশ যদি সত্যিই জামায়াতের জোটে যোগ দেয়, তাহলে এটি হবে বিএনপির যুগপৎ মিত্র কাঠামোতে প্রথম বড় ধরনের ফাটল।

কেএইচ/এমএমএআর/জেআইএম