প্রচ্ছদ জাতীয় অবহেলিত রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কি এবার মর্যাদা পাবেন?

অবহেলিত রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কি এবার মর্যাদা পাবেন?

আত্মীয়-স্বজন ও মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে জীবিকার তাগিদে প্রতিবছর বিদেশে পাড়ি জমান কয়েক লাখ মানুষ। যারা নিজেদের ভাগ্য বদলের সঙ্গে সচল রাখেন দেশের অর্থনীতির চাকা। এমনকি দেশের বিভিন্ন সংকটে তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশকে দুর্যোগ-দুর্বিপাক থেকে রক্ষা করেন। কিন্তু সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বরাবরই অবহেলার চোখে দেখা হয়।

ক্ষমতার পালাবদল হয় ঠিকই কিন্তু প্রবাসীদের মর্যদা নিশ্চিত হয়না। শুধু প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসেই প্রবাসীদের মর্যদা ও সুযোগ সুবিধা সীমাবদ্ধ থাকে। মর্যাদা তো দূরের কথা বরং তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। সেটি বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া থেকে দেশে ফেরা পর্যন্ত। এমনকি শ্রমখাতে দালালদের দৌরাত্ম ও এজেন্সিগুলোর অনিয়ম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায় না। ফলে সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের আমলে নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম কারণে বন্ধ হয়ে গেছে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার। এমনকি অনেক শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়েছে।

প্রবাসীরা যখন বিদেশ থেকে দেশে আসেন তখন বিমানবন্দরেই তাদের নানা ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। প্রবাসীদের শ্রমঘামে অর্থে কেনা জিনিসপত্র বিমানবন্দর থেকেই চুরি হয়ে যায়। এছাড়াও কোন প্রবাসী বিদেশে মারা গেলে তাদের লাশ দেশে আনতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারেই বছরের পর বছর রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।

মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যক্রম সংস্কার চেয়ে হাইকোর্টে রিটমাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যক্রম সংস্কার চেয়ে হাইকোর্টে রিট
সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় প্রবাসীরাও ফুঁসে ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। এতে কয়েকটি দেশে প্রবাসীদের আটক করে সেই দেশের পুলিশ। তবুও থেমে থাকেনি প্রবাসীরা। যখন ছাত্র-জনতা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তখন প্রবাসীরা রেমিট্যান্স না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যার প্রভাব পড়ে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে। তারা রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে পরোক্ষভাবে আন্দোলনে অংশ নেয়। তাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অভ্যুত্থানের পর প্রবাসীরা বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাতে রেমিট্যান্স আসা থমকে গেলেও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবারও গতি বেড়েছে। আগস্ট মাসের ২৪ দিনে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় এসেছে ১৭১ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ হাজার ৩৭২ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৪০ টাকা)। এ হিসাবে প্রতি দিন প্রবাসী আয় এলো ৭ কোটি ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩ মার্কিন ডলার। রবিবার (২৫ আগস্ট) এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১০ টাকার মোমবাতি ১০০, সুযোগসন্ধানীদের পোয়াবারো১০ টাকার মোমবাতি ১০০, সুযোগসন্ধানীদের পোয়াবারো
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে প্রবাসী আয় আসা কিছুটা কমে যায়। কিন্তু চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর থেকে প্রবাসী আয় আবার ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। গত জুলাই মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসে ৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার মার্কিন ডলার। আগের বছরের আগস্ট মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ১৫ হাজার ডলার। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম একসঙ্গে ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে জুন মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসে ৮ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬ কোটি ৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৭ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।

কুমিল্লায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা, ত্রাণের জন্য হাহাকারকুমিল্লায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা, ত্রাণের জন্য হাহাকার
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর তাই প্রবাসীরা অন্তবর্তী সরকারের কাছে শ্রমখাত সংস্কারের দাবি তুলছে। এই খাতে তৈরি হওয়া সিন্ডিকেট ও নৈরাজ্য ভেঙ্গে ফেলার দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রবাসীরা যাতে সত্যি সত্যিই রেমিট্যান্স যোদ্ধার মর্যাদা পায় সেই প্রত্যাশা করছেন। তবে প্রবাসীদের সঙ্গে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও তাদের মর্যাদার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।

গত রবিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থানে বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতি তাদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণ করবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে আমরা তাদের অংশগ্রহণ চাইব।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের একটি লক্ষ্য হবে বিদেশগামী এবং প্রত্যাবর্তনকারী প্রত্যেক প্রবাসী শ্রমিককে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে দেশে আসা এবং যাওয়া নিশ্চিত করা। সে ব্যাপারে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশে অবস্থানরত সবার কাছে আমার আবেদন, তারা যেন তাদের উপার্জিত অর্থ অফিসিয়াল চ্যানেলে দেশে পাঠান। দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে এ অর্থ বিশেষভাবে প্রয়োজন। কী কী ব্যবস্থা নিলে তাদের জন্য অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হবে, সেটা সম্বন্ধে আমরা তাদের পরামর্শ নেব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক লাইভে প্রবাসীদের নিয়ে বলেন, ‘বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তাদের বিশেষ অবদান রয়েছে। আন্দোলনের সময় আমাদের সমন্বয়কদের যখন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে যায় তখন তারা স্বপ্রণোদিতভাবে রেমিট্যান্স শাটডাইন কর্মসূচি পালন করে। তাদের এই কর্মসূচি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘটনোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক প্রবাসী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কিছু দাবি তুলে ধরেছেন। আমরা তাদের প্রত্যেকটি দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে বিশেষ কয়েকটি দাবির প্রতি আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’

প্রথমত কোন রেমিট্যান্স যোদ্ধা যখন বিদেশে মারা যান তখন তাদের লাশটি আনার ক্ষেত্রে ফি দিতে হয়, দ্বিতীয়ত প্রবাসীরা যখন আমাদের দেশের বিমানবন্দরে আসেন তখন তাদের বিভিন্ন হয়রানি পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক সুবিধা দেওয়া হয়। এমনকি বিদেশে যাওয়ার পূর্বে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা মতো বিষয়গুলি আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা প্রবাসীদের এই দাবিগুলো অতিদ্রুত সমাধানের জন্য দাবি জানাবো।’

সুূুত্রঃ Desh Rupantor

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।