
হেড লাইন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তায় মানববন্ধন শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছে ছাত্রলীগও। তারাও ধর্ষকদের বিচারের দাবি জানিয়েছে। মানববন্ধনে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছে ৩ দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে, অছাত্রদের হল থেকে বের করতে হবে এবং এই ধর্ষণের বিচার ছাড়া সিন্ডিকেট নয়।
এ বিষয়ে হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, একজন ভিকটিমকে তার ধর্ষণের এ কলঙ্ক সারাজীবন বয়ে যেতে হয়। আমাদের উচিত সুনির্দিষ্টভাবে কারো পক্ষ না নেয়া। ধর্ষকদের শাস্তির দাবির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র ও অনেক শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু তিনি একজন প্রভোস্ট হিসেবে ধর্ষকদের পালাতে সাহয্য করে তা খুবই ন্যাক্কারজনক কাজ। খুব দ্রুত হল প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করছি এবং তার এ পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। অপর এক শিক্ষার্থী জানান, ধর্ষকদের পুষছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হলে অছাত্ররা কিভাবে থাকে? ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি করতে করতে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলছে। অতি দ্রুত এই ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। নইলে আমরা প্রশাসনিক ভবন ছাড়ব না।
বিক্ষোভ মিছিলে বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামিমা সুলতানা বলেন, এমন অথর্ব প্রশাসন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চলে না। প্রশাসনকে বলেছিলাম ৪২ ও ৪৩ ব্যাচ যারা অবৈধ শিক্ষার্থী, তারা যদি কোনো অন্যায় করে সেটির বিচার আপনারা করতে পারবেন না। এখন দেখবো এই ৪৫ ব্যাচ, যারা কাণ্ডটা ঘটিয়েছে তদের বিচারটা কী করেন? এ ঘটনায় জড়িতদের সার্টিফিকেট বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা সজাগ থাকলে প্রশাসন যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে না। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির বিচার ও পদত্যাগের দাবি করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি ও সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, জরুরি সিন্ডিকেট মিটিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব অধিকার বশির আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- পৈশাচিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদেও বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। দলমত নির্বিশেষে অছাত্রদের ৭ দিনের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ এবং গণরুমের চির অবসান নিশ্চিত করা।
পোষ্য কোটাসহ যাদের আবাসিক হলে অবস্থানের অধিকার নেই তাদের ৩ দিনের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ প্রদানসহ তা কার্যকর করা। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা। একাডেমিক কাজের বাইরে (বহিরাগত ব্যক্তি) সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ ও যাতায়াত নিষিদ্ধ করা। মোটরসাইকেল ও অটোরিক্সা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। সব গেট/অফিস/ভবনে সিসি টিভি নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এর আগে গতকাল শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন আবাসিক হলের ৩১৭ নং কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনুর রশীদ মামুন।
এ ঘটনার অভিযোগে এখনো পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি। সংবাদ সম্মেলন শেষে আসামিদের ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়েছে। আটক আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, হাসানুজ্জামান, ৪৬ তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিক এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ভুক্তভোগীর স্বামী রাতেই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীকে স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।