
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক দীর্ঘকালীন শাসনের পরিণতি এখন স্পষ্ট। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অনেক বিতর্ক, সমালোচনা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে এক কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। এখন যখন তাঁর শাসনামলের শেষপ্রান্তে দেশ পৌঁছেছে, তখন এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে—পতনের পূর্বে শেখ হাসিনার মূল পরিকল্পনা আসলে কী ছিল?
শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা ও নিরাপত্তা খাতের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তিনি অনেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন, যাতে বিরোধী দলগুলোকে কোণঠাসা করে রাখা যায়। তার পরিকল্পনায় ছিল নির্বাচন ব্যবস্থাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্ভাবনা সীমিত থাকে।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার অন্যতম বড় পরিকল্পনা ছিল নিজের পরিবারের কাউকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের উপযোগী করে তোলা। বিশেষ করে তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সামনে নিয়ে আসার আলামতও বহুবার প্রকাশ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থায় তার সম্পৃক্ততা এবং দেশে বিভিন্ন মঞ্চে উপস্থিতি এই পরিকল্পনারই অংশ বলে ধারণা করা হয়।
সামরিক কৌশল নয়, বরং প্রশাসনিক ও ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ ছিল হাসিনার আরেকটি বড় হাতিয়ার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কড়া বিধিনিষেধের মাধ্যমে সরকার বিরোধী কণ্ঠকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। মূলধারার গণমাধ্যমে একচেটিয়া খবর প্রচার এবং বিকল্প মত দমন ছিল তার শাসনকৌশলের অংশ।
পতনের আগে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে সচেষ্ট ছিলেন। বিশেষ করে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কূটনৈতিক ভিত্তি গড়তে চেয়েছেন। তবে পশ্চিমা বিশ্বের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে সমালোচনার মুখে তাঁর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।
শেখ হাসিনার পতনের আগে তাঁর পরিকল্পনাগুলো ছিল মূলত ক্ষমতা ধরে রাখা, উত্তরাধিকার তৈরি, বিরোধী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং আন্তর্জাতিক মহলে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করা। তবে এইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়াসই হয়তো শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ, বিদেশি চাপ ও রাজনৈতিক পতনের পথ প্রশস্ত করেছে।