প্রচ্ছদ আন্তর্জাতিক বাংলাদেশকে সতর্কবার্তা পাঠাল ইরান

বাংলাদেশকে সতর্কবার্তা পাঠাল ইরান

আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতায় একটি রাষ্ট্রের জন্য কেবল স্বাধীনতা বা উন্নয়ন যথেষ্ট নয়—প্রয়োজন প্রযুক্তিনির্ভর শক্তিশালী সামরিক প্রতিরক্ষা। ইউক্রেনের অভিজ্ঞতা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করেও বিশ্বশক্তির আশ্বাসে ভরসা রেখে শেষমেশ রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার হতে হয়েছে তাদের।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রম করলেও এখনো পর্যন্ত শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। দেশটির মূল প্রতিরক্ষা নির্ভর করছে সীমিত পরিসরের চীনা FM-90 মিসাইল সিস্টেমের উপর। বিশাল আকাশসীমা, সমুদ্র অঞ্চল ও ভূখণ্ড রক্ষায় এই ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়—এমনই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।

অতীতের গৌরবগাথা যেমন সাইফুল আজমের যুদ্ধজয় কিংবা সাহসী সৈনিকদের আত্মত্যাগ—এসব স্মরণীয় হলেও, বর্তমান বাস্তবতা বলছে বাংলাদেশ এখনো ৩০৩ রাইফেল নিয়েই আধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হয়। অথচ পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান এমনকি মিয়ানমারও আধুনিক বিমান ও মিসাইল প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে বহুদূর।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন—আরাকান আর্মি বা বার্মার জান্তা সরকার যদি ভুল করেও মিসাইল হামলা চালায়, তাহলে বাংলাদেশ কি তা প্রতিরোধ করতে পারবে? দেশের এয়ার ডিফেন্স বা রাডার প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা এ প্রশ্ন আরও জোরালো করে তোলে।

এদিকে প্রযুক্তি খাতে অগ্রগতি না থাকার উদাহরণ আরও স্পষ্ট। থাইল্যান্ডের AI সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রিত হলেও কোনো গবেষককে না পাঠিয়ে সেখানে গেছেন একজন প্রশাসনিক আমলা—যার প্রযুক্তিগত যোগ্যতা নেই। যেখানে প্রোটোকল বিজ্ঞানের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে উন্নয়ন কল্পনা করাও দুরূহ।

বাংলাদেশের পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত বেতন না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন—এ অবস্থায় সামরিক প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা কীভাবে সম্ভব? শুধু মিসাইল নয়, একটি ড্রোনও দেশের ভেতরে বানানো সম্ভব কিনা, সেই প্রশ্নও আজ ঘুরে ফিরে আসছে।

অন্যদিকে ইরান আন্তর্জাতিক অবরোধ সত্ত্বেও নিজস্ব মিসাইল প্রযুক্তি ও ড্রোন ব্যবস্থায় বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে আমরা দেখেছি, কীভাবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বহর ইসরায়েলের মাল্টি-লেয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ভেদ করে সফলভাবে আঘাত হানে। বিষয়টি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে—নিজস্ব প্রযুক্তি ছাড়া আত্মরক্ষা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরি আর বিসিএস-কে সমাজের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হলেও, বিজ্ঞান ও গবেষণাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে দেশের মেধাবীরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অথবা অবহেলিত হচ্ছেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন—বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। সামরিক সক্ষমতা শুধু যুদ্ধের প্রস্তুতি নয়, এটি একটি দেশের মর্যাদা, প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্ন।

ইরানের বার্তা স্পষ্ট—প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দিলে আগামী ২০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ আত্মনির্ভর এক শক্তিতে পরিণত হতে পারে। না হলে ভবিষ্যতে কোনো হাইপারসনিক মিসাইল বাংলাদেশের আকাশে উড়লে হয়তো কেবল অসহায়ভাবে গাইতে হবে: “আমার কিছুই করার ছিল না, গো..