
গত ১৩ জুন শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাত দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ালেও থামার কোনো লক্ষণ নেই। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে বটে, তবে বাস্তবে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন পাল্টাপাল্টি হামলা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়।
ইসরায়েল দাবি করছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এই কারণেই তারা একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। এর জবাবে ইরানও ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে কোনো শান্তিপূর্ণ আলোচনার সুযোগ নেই।
এ অবস্থায় ইরানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা মাজিদ ফারাহানী একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি করেছেন। তিনি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইলেই এই যুদ্ধ থামাতে পারেন। শুধুমাত্র একটি ফোনকলেই ইসরায়েলকে হামলা বন্ধ করতে বলা সম্ভব, আর তাতেই আলোচনার দরজা খুলে যেতে পারে।
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ফারাহানী জানান, ইরান এখনো সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তবে এর আগে ইসরায়েলকে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, ইরান পুরোপুরি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের প্রস্তাব মেনে নেবে না। যদিও কিছুটা নমনীয়তা দেখানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি জড়ালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। ফারাহানী হুঁশিয়ার করে বলেছেন, যদি আমেরিকা সরাসরি যুক্ত হয়, তাহলে ইরান হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। তেহরানের হাতে অনেক বিকল্প খোলা রয়েছে।
এদিকে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে দেশ ছাড়ছেন অনেক সাধারণ মানুষ। আকাশপথ বন্ধ থাকায় আর্মেনিয়ার সীমান্ত হয়ে পালিয়ে যাওয়াই একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠেছে। তবে এই পাহাড়ি পথও সহজ নয়। ট্যাক্সিচালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে তিনগুণ, তবুও মানুষজন বেরিয়ে পড়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলোও ইসরায়েলের পাশে অবস্থান নিয়েছে। তারা চাইছে, ইরান যেন শূন্য মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ফিরে যায়। তবে ইরানের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
এই অবস্থায় পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক চাপ, কূটনীতি এবং প্রতিপক্ষের কার্যকলাপের ওপর। তবে একথা নিশ্চিত— ইরান আর পিছিয়ে যাবে না।