প্রচ্ছদ জাতীয় বিএনপি নেতার গুদাম থেকে ১৩৫১৫ কেজি চাল উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

বিএনপি নেতার গুদাম থেকে ১৩৫১৫ কেজি চাল উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

নেত্রকোণার কেন্দুয়া পৌর বিএনপি সভাপতি খোকন আহমেদের গুদাম থেকে ৩০৪ বস্তা অবৈধভাবে মজুদ করা সরকারি চাল উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় পৌর শহরের বাদে আঠারো বাড়ি এলাকায় বিএনপি নেতার মালিকানাধীন মেসার্স নাহার ট্রেডার্সের গুদামে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। পরে সেখান থেকে ১৩ হাজার কেজিরও বেশি (৩০৪ বস্তা) সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়। অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যান বিএনপি নেতা খোকন আহমেদ।

শনিবার (২১ জুন) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মদনের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জামিউল ইসলাম সাকিব।

অভিযুক্ত মো. খোকন আহমেদ (৫০) কেন্দুয়া পৌর বিএনপির সভাপতি। তিনি পৌর শহরের কেন্দুয়া পৌরসভার বাদে আঠারো বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। এলাকায় তার মালিকানাধীন মেসার্স নাহার ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ভিজিএফের মাধ্যমে দরিদ্রদের বিতরণের জন্য দেয়া বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল নিজের গুদামে অবৈধভাবে মজুদ করেন খোকন আহমেদ। এমন গোপন সংবাদে শুক্রবার দুপুরে কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারো বাড়ি এলাকায় থাকা মেসার্স নাহার ট্রেডার্সের গুদামে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযান টের পেয়ে একটি হ্যান্ডট্রলি করে এসব চাল গুদাম থেকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন ওই বিএনপি নেতা। এ সময় হ্যান্ডট্রলিটি বঙ্গানিয়া মোড় থেকে আটক করে পুনরায় গুদামের সামনে নিয়ে আসে।

পরে গোডাউন ও ট্রলিসহ মোট ৩০৪ বস্তা চাল জব্দ করা হয়, যার ওজন প্রায় ১৩ হাজার ৫১৫ কেজি। এসব চালের বাজারমূল্য আনুমানিক ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৩০ টাকা বলে জানা গেছে।
অভিযানের সময় খোকন আহমেদকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করে ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত হননি। এক পর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। ফলে তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

জব্দকৃত চালের মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের পাটের বস্তা, টিসিবির বস্তা, নীল, সাদা ও হলুদ রঙের বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তা ছিল বলে জানা গেছে।

বর্তমানে জব্দ করা চাল কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসনের হেফাজতে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত বিএনপি নেতা খোকন আহমেদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি, এ নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে সেনাকর্মকর্তা জামিউল ইসলাম সাকিব বলেন, জব্দকৃত হ্যান্ডট্রলিতে ৩০৪ বস্তা সরকারি আতব চাল ছিল। সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকারিভাবে এসব চাল দেয়া হয়েছিল। হ্যান্ডট্রলিতে নিচে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি বস্তা, আর উপরে কিছু সাদা বস্তায় চালগুলো রেখে নিয়ে যাচ্ছিল। সঙ্গে থাকা লোকজন বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে বলেছে- বিতরণের পর বেঁচে যাওয়া এসব চাল তারা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কিনেছেন। অনুমতি থাকলে তারা চালগুলো এভাবে লুকিয়ে নিয়ে যাবে কেন? এটাও প্রশ্ন। বেঁচে যাওয়া চাল বিক্রি করার নিয়ম আছে কিনা বিষয়টা জানতে হবে। এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ছুটিতে আছেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলব।

তিনি বলেন, গুদামের মালিক খোকন আহমেদকে মোবাইল ফোনে কল করে ডাকা হলেও তিনও আসেন নি। এক পর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। উপস্থিত দুইজনকে আটক করা হলেও তাদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মো. খোকন আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, জব্দকৃত চালগুলো উপজেলা প্রশাসনের কাছে রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, আমি ছুটিতে আছি। ঘটনা শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।