প্রচ্ছদ সারাদেশ প্রবাস ফেরত যুবকের এক সফলতার গল্প

প্রবাস ফেরত যুবকের এক সফলতার গল্প

১৪ বছর বয়সে পাসপোর্ট হাতে মালয়েশিয়ার পথে পাড়ি দিয়েছিলেন বাবু মিয়া। তার আগে-পরে পড়াশোনায় খুব একটা মন ছিল না, তবু স্বপ্ন ছিল কিছু একটা করার। মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর, সেখান থেকে আবার মালয়েশিয়া-সাফল্য ধরা দেয়নি কোথাও। পরে দীর্ঘ ১০ বছর কাটে ইরাকে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন, বিদেশ নয়, নিজের গ্রামেই কিছু করবেন।

বাড়ি ফিরে গাভি দিয়ে শুরু করেন খামার। সময়ের সঙ্গে সেটা পরিণত হয় বড় ষাঁড়ের খামারে। এখন সেই খামারে আছে দেশি-বিদেশি উন্নত জাতের প্রায় ৩০টি ষাঁড়। আর পাহারায় আছে চার চারটি বিদেশি কুকুর।

 

বাবু মিয়ার (৩২) বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের গৌরাঙ্গপুর গ্রামে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। খামারের নাম দিয়েছেন ‘তাসফিয়া ডেইরি ফার্মশুরুটা তিনটি গাভি দিয়ে

 

তিনটি গাভি দিয়ে খামার শুরু করেছিলেন বাবু মিয়া। বছর কয়েকের মধ্যেই সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০টির মতো গরুতে। তবে ২০২০ সালের দিকে শুরু হওয়া করোনা মহামারিতে গাভির দুধের দাম পড়ে যায়, বিপাকে পড়েন তিনি। লোকসানে পড়ে গাভিগুলো বিক্রি করে খামার কিছুদিন বন্ধও রাখেন। পরে আবার নতুন করে শুরু করেন। এবার গাভির বদলে মন দেন ষাঁড় পালনে। নিজেই খুঁজে খুঁজে সংগ্রহ করেন দেশি ও বিদেশি উন্নত জাতের বাছুর। ব্রাহামা, শাহিওয়াল, জার্সি—নানা জাতের ষাঁড়। এখন তাঁর খামারে আছে ৩০টির মতো বড় ষাঁড়, যেগুলোর ওজন ৫০০ থেকে ১ হাজার কেজি পর্যন্ত। এসব ষাঁড় প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে বিক্রি করেন। দামের শুরু ৫ লাখ থেকে, কিছু ষাঁড়ের দাম ১৫ লাখ টাকাও ছাড়াখামারে পাহারায় বিদেশি কুকুর

 

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাংশা সরদার বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও পাঁচ-ছয় কিলোমিটার ভেতরে গৌরাঙ্গপুর গ্রামে বাবু মিয়ার খামার। পুরো খামারে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরা। তবে তাঁর আসল ভরসা খামারের চার–চারটি বিদেশি কুকুর।

 

খামারে গিয়ে দেখা গেল, কুকুরগুলো লোহার খাঁচার ভেতর থেকেও এমনভাবে ঘেউ ঘেউ করছে, যেন সুযোগ পেলে কামড়ে ছিঁড়ে ফেলবে! একটি ঘরে সারি সারি বড় ষাঁড় বাঁধা, পাশের ঘরে আছে বাছুর। একজন শ্রমিক ঘাস কাটছিলেন বৈদ্যুতিক যন্ত্রে, আরেকজন দিচ্ছিলেন খাবার।

 

বাবু মিয়া বলেন, ‘মানুষ বেইমানি করলেও পোষা কুকুর কখনো বেইমানি করে না।…দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তাটা জরুরি। কুকুরগুলো না ঘুমিয়ে সারা রাত পাহারা দেয়।’ খামারে প্রতিদিন কুকুরগুলোর খাবারে খরচ হয় প্রায় ৫০০ টাকা। ‘এক বেলা মুরগির মাংস, ভাত, সবজি—সবই খায় ওরা। বাইরের কোনো পাখি, কাঠবিড়ালিও ঢুকতে পারে না,’ যোগ করেন বাবুএকাধিক ষাঁড় কিনলে উপহার দেন ছাগল

 

খামারে আছে কয়েকটি উন্নত জাতের ছাগলও। বাবু মিয়ার ভাষায়, ‘একেকটা ছাগলের ওজন ৮০ থেকে ৯০ কেজি। যেসব ক্রেতা একাধিক ষাঁড় কেনেন, পছন্দসই হলে তাঁদের এসব ছাগল উপহার হিসেবে দিয়ে দিই।’

 

 

এই খামার গড়ে তুলতে বাবুর প্রতিদিন লেগে থাকে খাটুনি। প্রতি মাসে ব্যয় হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। বছর শেষে ষাঁড় বিক্রি করে সে ব্যয় উঠিয়ে লাভের মুখ দেখেন তিনি। তবে লাভের পরিমাণ জানাতে চাকষ্টটা বেশি, লাভটা অনিশ্চিত

 

খামারে ষাঁড়গুলোকে দেওয়া হয় প্রাকৃতিক খাদ্য—ঘাস, গমের ভুসি, চালের গুঁড়া, গমের ছাল। তবে এসব জোগাড় করতে এখন হিমশিম খেতে হয়। বাবু মিয়া বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর আগে গমের ভুসি কেজি ২৫-৩০ টাকায় পেতাম। এখন সেটা ৫০-৫৫ টাকা। সব খাবারের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।’

 

কষ্টের পাশাপাশি আছে অভিযোগও। প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহায়তা পাননি কখনো। তিনি বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁর নাম নেই। এমনকি খামারি হিসেবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের তালিকায়ও নাম নেই। এখন পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা পাননি। যে কারণে তাদের কাছে তিনি যান না।

 

রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রাহামা, শাহিওয়াল, জার্সিসহ উন্নত জাতের ষাঁড় কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদন করে অনেকে খামার করছেন। বাবু মিয়ার খামারও পরিদর্শন করেছি। তাঁর চেষ্টা প্রশংসনীয়। আমরা তাঁকে পরামর্শ দিই। ভ্যাকসিন বা কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া ছাড়া বড় সহায়তা দেওয়ার সুযোগ নেই।’ননি। মিয়া।