
হিজরি বর্ষের ১২তম মাস জিলহজ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি মাস। এই মাসের ৯ তারিখকে বলা হয় ‘ইয়াউমুল আরাফা’ বা আরাফার দিন। আরবি বর্ষপঞ্জিকার এই মাস ছাড়াও রজব, জিলকদ ও মহররমকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে জিলহজ মাসের আমল খোদ মহান রবের কাছে অনেক প্রিয়। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল অন্যান্য দিনের আমলের তুলনায় উত্তম। তারা (সাহাবায়ে কেরামগণ) জিজ্ঞাসা করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? রাসুল (সা.) বললেন, জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা স্বতন্ত্র, যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদ করে এবং কিছু্ই নিয়ে আসে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯১৮)
এ ক্ষেত্রে ‘ইয়াউমুল আরাফা’ বা আরাফার দিনে রোজার রাখার বিশেষ ফজিলতও রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে অন্য কোনো নফল রোজার এত বেশি ফজিলত পাওয়া যায় না। আবূ কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোজা) পালন করা এবং রমজান মাসের সাওম এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত সারা বছর সাওম পালনের সমান। আর আরাফাত দিবসের সাওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের ক্ষতিপূরণ (মাফ) হয়ে যাবে। এছাড়া আশুরা’র সাওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬১৭)
তবে আরাফার দিবসের রোজা কতটি এবং কোনদিন সেটি রাখতে হবে এটি নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়েন। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আরাফার রোজা একটি। দু’টি কিংবা তিনটি নয়। জিলহজ মাসের চাঁদের ওপর ভিত্তি করে ৯ জিলহজ আরাফার দিবসের রোজা রাখতে হয়। যারা হজে যান না তাদের জন্য এই দিনে রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। আর হাজিদের আরাফার ময়দানে অবস্থানের দিনই মূলত আরাফার রোজা রাখতে হয়।
অনেক আলেমগণ মনে করেন, হাজিরা যেদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন সেদিন এই রোজা রাখতে হয়। কেউ যে দেশেই থাকুক, যেহেতু রাসুল (সা.) কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি, বরং নির্দিষ্ট একটি বিশেষ দিনের উল্লেখ করেছেন। সেই দিনটি হলো আরাফার দিন, অর্থাৎ হজের দিন, যেদিন হাজিরা আরাফা ময়দানে অবস্থান করেন।
আবার অনেকে মনে করেন, যে দেশে চাঁদ দেখার ওপর যেদিন জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হবে, সেখানকার অধিবাসীদের জন্য সেদিনই আরাফার দিন। যদিও অধিকাংশ আলেমদের মত হলো- পবিত্র হজ পৃথিবীতে শুধুমাত্র এক জায়গায় হয়, সেটি মক্কা শরিফেই। তাই সারা পৃথিবীতে সেই হজের দিনই আরাফার রোজা পালন করতে হবে। শায়খ আহমাদুল্লাহর মতো আলেমগণও এ বিষয়ে একমত।
চলতি বছর (১৪৪৬ হিজরি) আগামী ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বিষয়টি নির্ভর করছে। এই হিসাবে চলতি বছর দেশে আগামী ৬ বা ৭ জুন (শুক্র বা শনিবার) আরাফার দিন হতে পারে।
সূত্র: চ্যানেল২৪